আপনার কল কেউ রেকর্ড করছে কি না জেনে নিন

জরুরি তথ্য সেভ করে রাখার জন্য আপনার কল রেকর্ড করতে পারেন যে কেউ। এই রেকর্ড করার জন্য স্মার্টফোনে ইনবিল্ট ভয়েস কল রেকর্ডিং ফিচার দেয় অনেক প্রতিষ্ঠান।

যে সব অ্যান্ড্রয়েড স্মার্টফোনে এই ফিচার নেই তারা গুগল প্লে স্টোর থেকে অ্যাপ ডাউনলোড করে পেতে পারেন ভয়েস কল রেকর্ডিং করার সুবিধা দেয়।

তবে কল রেকর্ড করার সময় অবশ্যই উভয়পক্ষের সম্মতি থাকা প্রয়োজন। তাই কল করার সময় খেয়াল রাখা উচিত যে আপনার কল রেকর্ড হচ্ছে না তো!

যদি আপনার ভয়েস কল করার সময় মনে হয়ে যে, কয়েক সেকেন্ড বা মিনিটের জন্য একটি বিপ এর মত শব্দ শুনতে পাচ্ছেন তবে আপনাকে বুঝতে হবে যে আপনার কল রেকর্ড করা হচ্ছে।

ভয়েস কলের শুরুতে বা মাঝে-মাঝে বিপের মত শব্দ হয় তখন সবসময় কল রেকর্ডিংয়ের সম্ভাবনা থাকে।

কোনও কল রেকর্ড করা হচ্ছে কিনা তা জানার আরেকটি উপায় হল আপনি যদি কাউকে কল করে থাকেন এবং সে আপনার কলটি স্পিকারে রেখে দেয় তবে ধারণা করতে পারেন আপনার কলটি রেকর্ড করা হচ্ছে।

পাশাপাশি আপনি যদি কাউকে কল করে থাকেন এবং সেই সময় আপনি যদি অন্যরকম শব্দ পেয়ে থাকেন, তবেও আপনার কল রেকর্ড হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়। এই অবস্থায় অনেক সময় আপনি মাঝে মাঝে অপ্রত্যাশিত শব্দ পেতে পারেন। তাই কল করার সময় ছোট ছোট বিষয়গুলোতে মনোযোগ দেওয়া গুরুত্বপূর্ণ।

তবে অনলাইন কিছু এমন অ্যাপ রয়েছে, যেখানে বিপ শব্দ ছাড়াও কল রেকর্ড করা যায়।

 

কল রেকর্ড হলেই আপনাকে জানাবে গুগল

অজান্তেই রেকর্ড হয়ে যাচ্ছে আপনার ফোন কল (Phone Call Recording)? রেকর্ড হয়ে যাচ্ছে ব্যক্তিগত কথোপকথন? কীভাবে এর হাত থেকে নিস্তার পাবেন? কী জানাচ্ছে গুগল (Google Call Recording)?

 

ক’দিন আগেই রাজ্য বিধানসভা ভোট (West Bengal Election 2021) চলাকালীন মোবাইলের কল রেকর্ডিং (Phone Call Recording) ফাঁস করা নিয়ে বিস্তর জলঘোলা হল। রাজনৈতিক দলগুলি ফাঁস করে দিচ্ছিল একে অপরের কল রেকর্ডিং। খাস নন্দীগ্রামের (Nandigram) হেভিওয়েট লড়াইয়েও সামনে এসেছে দুই প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বীর মোবাইলের কল রেকর্ডিং। এ বার ফোনের অন্য প্রান্তের ব্যক্তিটিকে না জানিয়ে মোবাইলে কল রেকর্ডিংয়ের দিন ফুরোচ্ছে।

অ্যান্ড্রয়েড (Android) ফোনে যথেচ্ছ এই কল রেকর্ডিংয়ে বিধি-নিষেধ চাপিয়েছে গুগল। নতুন অ্যান্ড্রয়েড ফোন, তা সে কোম্পানিরই হোক না কেন, তাতে এ ভাবে না জানিয়ে কারও কল কেউ রেকর্ড করা যাবে না। নতুন স্মার্ট ফোনে কল রেকর্ডিংয়ে বসালেই একটি যান্ত্রিক স্বরে ফোনের ওপারে থাকা ব্যক্তির কাছে বার্তা যাবে, ‘আপনার এই কলটি রেকর্ড করা হচ্ছে।’ আবার রেকর্ডিং বন্ধ করা হলে সেই বার্তাও দু’জনেই পাবেন। কনফারেন্স কলের ক্ষেত্রেও তাই হবে।

ইন্ডিয়ান স্কুল অফ এথিক্যাল হ্যাকিংয়ের অধিকর্তা সন্দীপ সেনগুপ্তর বক্তব্য, ‘ইউরোপের জেনারেল ডেটা প্রোটেকশন রেগুলেশন অনুযায়ী কাউকে জানিয়ে কারও কল রেকর্ড করা দণ্ডনীয় অপরাধ। গোপনীয়তায় হস্তক্ষেপ। গুগল-সহ অন্যান্য অনেক সংস্থা সফটওয়্যারে এ ধরনের সুযোগ রেখে বাজারে পণ্য নিয়ে আসায় তাদের বিরুদ্ধে মামলাও হয়েছে।’

সন্দীপের বক্তব্য, ‘সেই কারণেই সাধারণ ভাবে সারা বিশ্বের জন্য কতগুলি সাধারণ পরিবর্তন সব সফটওয়্যার কোম্পানিই আনছে। গুগলও এনেছে এবং তাতেই এই কল রেকর্ডিং অ্যালার্ট শুনতে পাওয়া যাচ্ছে।’ ঘটনা হল, ডেটা প্রোটেকশন বা তথ্যের সুরক্ষা সংক্রান্ত একটি প্রস্তাব সংসদে পেশ হয় ২০১৮ সালে।

২০২০ সালে সেই প্রস্তাব পাশ হওয়ার কথা থাকলেও এ দেশে তথ্যের অধিকার এতটাই বিরল ও বিষম বস্তু যে তা আর দিনের আলো দেখেনি। কিন্তু গুগলের মতো বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে থাকা সংস্থাকে আন্তর্জাতিক স্তরের মানদণ্ড মানতে হয়।

ফলে এ দেশে আইন থাকুক না থাকুক, তার অনেক আগেই গোপনীয়তা রক্ষার খাতিরে এই ফিচার নিয়ে আনা হলো। গুগল এমন নির্দেশিকা নিয়ে এলেও অ্যাপল-এর ফোনে বা মাইক্রোসফটের লুমিয়া ফোনে আগেই কল রেকর্ডিং অপশন ছিল না। তবে অ্যান্ড্রয়েড ফোনের বহু ব্যবহারের জন্যই এবার প্রশ্নটা জোরদার হচ্ছে।

এখন প্রশ্ন হচ্ছে দু’টি

প্রথম প্রশ্নটি তুলছেন পেশায় একটি নির্মাণ সংস্থার কর্ণধার গৌতম মুখোপাধ্যায়। তাঁর কথায়, ‘নির্মাণের কাজে ঝুঁকি রয়েছে। প্রতিনিয়ত বহু মানুষের ফোন আসে বা যায় যেগুলি নিজের সুরক্ষার কারণেই আমাকে রেকর্ড করে রাখতে হয়। কল রেকর্ডিং আমার কাছে সেই কারণে একটি গুরুত্বপূর্ণ পরিষেবা ছিল।’ অসুবিধা টের পাচ্ছে রাজনৈতিক মহলও।

তৃণমূল সাংসদ সুখেন্দুশেখর রায়ের কথায়, ‘রাজনীতিবিদরা হলেন সবচেয়ে সফট টার্গেট তাই অনেক সময় অনেককেই এই রেকর্ডিংয়ের রাস্তায় হাঁটতে হয়। কিন্তু তাঁরাই আবার সবচেয়ে বড় আক্রমণের বিষয় হন। তাই গুগলের এই নীতিতে প্রথমে খানিকটা অসুবিধা হলেও পরে আমার ধারণা সকলেরই এতে ভালো হবে। অকারণ হয়রানি থেকে মানুষ মুক্ত হবে।’

দ্বিতীয় প্রশ্নটি হল, এভাবে কি কল রেকর্ডিং আটকানো বন্ধ করা যাবে? সাইবার আইন বিশেষজ্ঞ বিভাস চট্টোপাধ্যায়ের বক্তব্য, ‘আমাদের দেশের যা আইন, তাতে অন্য পক্ষকে না-জানিয়ে কল রেকর্ডিং করা সরাসরি অপরাধ এখনও নয়। কিন্তু প্রস্তাবিত গোপনীয়তা রক্ষার আইনে এ ব্যাপারে কিছু সংস্থান রয়েছে।

অনুমতি ছাড়া কল রেকর্ডিং করা হলে হাইকোর্টে রিট পিটিশন করা যেতে পারে। আর সুপ্রিম কোর্ট গোপনীয়তাকে মৌলিক অধিকার বলায় সংবিধানের ৩২ নম্বর ধারা অনুযায়ী সেখানে মামলা হতে পারে।’ কিন্তু সরকারি ভাবে কল রেকর্ডিং করা না হলেও ফোনটিকে স্পিকারে দিয়ে পাশে অন্য ফোন লাগিয়ে বা থার্ড পার্টি কোনও অ্যাপ (এসিআর অ্যাপ) দিয়েও কল রেকর্ড করা সম্ভব বলে মনে করছেন অনেকেই।

BJP নেতা শমীক ভট্টাচার্য বলছেন, ‘এতে অনেকেই স্বস্তি হবে। তবে কোনও প্রযুক্তি দিয়ে নয়, মানুষের রুচির উপরেই বিষয়টা ছাড়া ভালো।’ বিধানসভা নির্বাচনে নন্দীগ্রামের দুই মহারথীর সঙ্গে যাঁর কথোপকথনের কল রেকর্ডিং সামনে এসেছিল, সেই প্রলয় পাল কী বলছেন? প্রশ্নের জবাবের জন্য প্রলয়কে ফোন করা হয়েছিল। ঘটনাচক্রে তাঁর ফোনটি ছিল সুইচড অফ।

গুগল কল রেকর্ড (Google Call Recording) অ্যালার্ট কী?

  1. ফোনে আগের মতো একতরফা কল রেকর্ড করা যাবে না
  2. গুগল ডায়ালার প্রিইনস্টল অ্যাপ থেকেই ফোন করতে হবে
  3. ফোনটিকে রেকর্ডিংয়ে দিলে একটি যান্ত্রিক ভয়েসে দু’পক্ষকেই শোনাবে এই কলটি রেকর্ড হচ্ছে
  4. এটিকে কোনও ভাবেই এড়ানো যাবে না
  5. তবে থার্ড পার্টি অ্যাপ দিয়ে কল রেকর্ডিং করা সম্ভব

Leave a Comment

error: Content is protected !!