যুক্তরাষ্ট্রে জিম্মি ঘটনার নেপথ্যে পাকিস্তানি বিজ্ঞানী আফিয়া সিদ্দিকী

চলতি সপ্তাহে যুক্তরাষ্ট্রে জিম্মি ঘটনার পেছনে রয়েছে মার্কিন সেনাদের হত্যাচেষ্টার অভিযোগে যুক্তরাষ্ট্রে বন্দি পাকিস্তানি বিজ্ঞানী আফিয়া সিদ্দিকী। আফিয়ার মুক্তির দাবিতে চারজনকে জিম্মি করা বলে এই ব্যাপারে ওয়াকিবহাল এক মার্কিন কর্মকর্তার বরাত দিয়ে গণমাধ্যমগুলো জানিয়েছে।

বার্তা সংস্থা এএফপি রোববার এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, আফিয়ার ৮৬ বছরের কারাদণ্ড ভোগ করছেন। গত সপ্তাহেই টেক্সাসে ওই তরুণীরে বেকসুর খালাসের জন্য চারজনকে জিম্মি করেছিলেন এক যুবক।

১০ ঘণ্টা পর জিম্মিরা অক্ষত অবস্থাতেই মুক্তি পান। এই ঘটনায় সন্দেহভাজনকে হত্যা করা হয়।

যুক্তরাষ্ট্রেই পড়াশোনা করেছিলেন পাকিস্তানি বিজ্ঞানী আফিয়া। আফগানিস্তানে মার্কিন সেনাদের হত্যাচেষ্টার অপরাধে তাকে ২০১০ সালে ৮৬ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়।

তার আইনজীবী এক বিবৃতিতে জানিয়েছিলেন, ওই জিম্মি পরিস্থিতির সঙ্গে আফিয়ার কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই। ওই ব্যক্তির কার্যকলাপের নিন্দাও জানিয়েছিলেন তিনি।

আল কায়েদার সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে আফিয়াই প্রথম নারী যাকে যুক্তরাষ্ট্র সাজা দিয়েছে। অবশ্য আফিয়া কখনো নিজে তার অপরাধ স্বীকার করেনি।

১৮ বছর বয়সে যুক্তরাষ্ট্রে আসেন আফিয়া। সেখানে তার ভাই থাকতেন। সেখানে এসে তিনি প্রথমে বোস্টনের এমআইটিতে পড়াশোনা করেন, পরে ব্র্যান্ডেস বিশ্ববিদ্যালয়ে নিউরোসায়েন্সে পিএইচডি অর্জন করেন।

২০০১ সালে ৯/১১ এর হামলার পর তিনি এফবিআইয়ের সন্দেহের তালিকায় চলে আসেন। একটি ইসলামি সংগঠনের জন্য ১০ হাজার মার্কিন ডলার ব্যয়ে নাইট গগলস গ্লাস ও বই কেনার জন্য মূলত তাকে ওপর সহেন্দ পড়ে। এসবের পর তিনি পাকিস্তানে ফিরে যান।

ওয়াশিংটনের ধারণা তিনি যুক্তরাষ্ট্রে থাকতেই আল কায়েদার সঙ্গে যুক্ত হয়েছিলেন। আফিয়ার স্বামী খালিদ শেখ মোহাম্মদকে ৯/১১ হামলার এক পরিকল্পনাকারী মনে করা হয়।

২০০৩ সালে পাকিস্তানের করাচিতে থেকে তিন সন্তানের সঙ্গে আফিয়া লাপাত্তা হয়ে যায়। পাঁচ বছর পর যুদ্ধবিধ্বস্ত আফগানিস্তানের দক্ষিণাঞ্চলীয় গাজনি জেলা থেকে স্থানীয় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তাকে গ্রেফতার করে।

সেখানে মার্কিন সেনারা জিজ্ঞাসাবাদ করার সময় একটি রাইফেল ছিনিয়ে নিয়ে গুলি ছোড়েন আফিয়া। সে সময় তিনি চিৎকার করে বলছিলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র নিপাত যাক’ এবং ‘আমি আমেরিকানদের হত্যা করতে চাই’।

মার্কিন সেনারা অক্ষত অবস্থায় পালিয়ে গেলেও আফিয়া এই ঘটনায় আহত হন।

এদিকে, সে সময় তার এই দণ্ডাদেশ পাকিস্তানে ব্যাপক ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। আফিয়া পাক-মার্কিন গোপন চক্রান্তের শিকার বলে তার সমর্থকরা দাবি করে আসছিলেন। তার দণ্ডাদেশের পর আল কায়েদার তৎকালীন উপপ্রধান এই সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে মুসলিমদের প্রতি ‘বদলা’ নেওয়ার অনুরোধ জানান।

আফিয়ার বিষয়টি নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই পাক-মার্কিন সম্পর্কের মধ্যে টানাপোড়েন চলছিল।

তার মুক্তির দাবিতে পাকিস্তানে অন্তত দুইবার জিম্মি পরিস্থিতি তৈরি হয়। ২০১৪ সালে মার্কিন সংবাদিক জেমস ফোলির শিরোচ্ছেদের পেছনেও আফিয়া ইস্যুর সংশ্লিষ্টতা রয়েছে বলে মনে করা হয়।

এমনকি পাকিস্তানের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানও তার নির্বাচনী প্রচারণায় আফিয়ার মুক্তির দাবি করেছিলেন।

Leave a Comment

error: Content is protected !!