বিসর্গের অপব্যবহার। আমরা এখনো অনেক বেশি উদাসীন! অক্ষরের প্রয়োগ, শব্দের বানান, শব্দ গঠন, শব্দ সংক্ষেপণ, শব্দের প্রয়োগ, বাক্য গঠন, যতিচিহ্নের ব্যবহার ইত্যাদি বিষয়ে। ভাষার গতি বৃদ্ধির জন্য শব্দসংক্ষেপ অপরিহার্য। প্রত্যেক ভাষারই রয়েছে সুনির্দিষ্ট নিয়ম।
আমাদের বাংলাভাষারও আছে। কিন্তু সে নিয়ম অনুসরণ করি ক’জন? যে যার পছন্দমতো ব্যবহার করে যাচ্ছি।
যেমন ডাঃ, মোঃ, সাঃ, জাঃ—এক্ষেত্রে বিসর্গ (ঃ) চিহ্নের অপব্যবহার করা হয়েছে শব্দ সংক্ষেপণে। ‘শিক্ষা মন্ত্রণালয় স্মারক নম্বর’ কথাকে সংক্ষেপে লেখা হচ্ছে ‘শিঃ মঃ স্মাঃ নং’—এভাবে। গভঃ দিয়ে গভর্নমেন্ট, প্রাঃ দিয়ে প্রাইভেট, লিঃ দিয়ে লিমিটেড, ছঃ দিয়ে ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম, রাঃ দিয়ে রাদিয়াল্লাহু আনহু লেখা হয়ে থাকে। বিসর্গ দিয়ে শব্দ সংক্ষেপ করা যায় না। যতিচিহ্নের কোনো উচ্চারণ ধ্বনি নেই। কেননা কোনো যতিচিহ্নই বর্ণ নয়। বিসর্গ (ঃ) একটি বর্ণ। বিসর্গে আছে উচ্চারণ ধ্বনি। আছে ব্যবহারের নিয়মকানুন।
অথচ আমরা অনেকেই না জেনে, না বুঝে এই বিসর্গ (ঃ) ধ্বনি ব্যবহার করছি যতিচিহ্ন হিসেবে। এইরূপ অপব্যবহূত বিসর্গ (ঃ)-এর উচ্চারণ করতে গেলেও অর্থ দাঁড়ায় অন্যরকম। যেমন ‘হাইমচর হামিদর্দ হাসপাতাল’-কে সংক্ষিপ্ত করতে গেলে হবে ‘হাঃ হাঃ হাঃ’। উচ্চারণ হবে ‘হাহ হাহ হাহ’। অর্থ দাঁড়াবে উচ্চস্বরে হাসির শব্দ।
শব্দ সংক্ষেপ করার জন্য ব্যবহার করতে হবে যতিচিহ্ন। একমাত্র দাঁড়ি (।) ছাড়া সব যতিচিহ্নই আমরা পেয়েছি বা নিয়েছি ইংরেজি ভাষা থেকে। তাই ব্যবহারও হচ্ছে ইংরেজি ভাষার রীতি অনুসারেই। সেমতে ব্যবহার করতে হবে ডট (.)। বাংলায় আমরা এর নাম দিয়েছি ‘বিন্দু’ (.) বা শব্দ সংক্ষেপণ চিহ্ন। যেমন ডা. মো. সা. জা., শি. ম. স্মা, এস. এস. সি, এম. এসসি, বি.এড, বি. ডি. আর. ইত্যাদি।
শুধু শব্দ সংক্ষিপ্ত করার জন্যই যে বিসর্গের (ঃ) অপব্যবহার হচ্ছে তা নয়; বিশ্লেষণ করার জন্যও অহরহ অপব্যবহূত হচ্ছে এই ধ্বনি। ‘যেমন-/যেমন:’ বিসর্গ দিয়ে লেখা হচ্ছে ‘যেমনঃ’, ‘নাম-/নাম:’ লেখা হচ্ছে ‘নামঃ’, ‘গ্রাম-/গ্রাম:’ লেখা হচ্ছে ‘গ্রামঃ’, ‘পোস্ট-/পোস্ট:’ লেখা হচ্ছে ‘পোস্টঃ’। বিসর্গের মতো এমন অনেক ধ্বনি, বর্ণ এবং যতিচিহ্ন প্রয়োগ আমাদের খামখেয়ালির জন্য বাংলাভাষা আজ ক্ষত-বিক্ষত ও দুঃখ-ভারাক্রান্ত।
মো., মোসা. লেখা হচ্ছে মোঃ, মোসাঃ। আজীবন এই ভুল বয়ে বেড়াচ্ছি আমরা সবাই। অথচ শিক্ষা বোর্ড এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসমূহ একটু সচেতন হলেই বন্ধ করা যায় এই ভুলগুলো। পরিহার করা যাবে বিসর্গের অপব্যবহার।
মো. মোয়াজ্জেম হোসেন, শিক্ষার্থী, ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা