বয়স্ক ভাতার লাখ লাখ টাকা আত্মসাৎ

সিংগাইরে বয়স্ক ভাতার লাখ লাখ টাকা আত্মসাৎ। মোবাইল ব্যাংকিংয়ে টাকা এলে নিজেরাই তুলে নেয় চক্রের সদস্যরা। বয়স্ক ভাতাভোগীদের নামে আসা লাখ লাখ টাকা লুটপাটের অভিযোগ উঠেছে একটি প্রতারক চক্রের বিরুদ্ধে।

২০২১-২২ অর্থবছরের(অতিরিক্ত) সমাজ সেবা অধিদপ্তর সিংগাইর উপজেলার জামির্ত্তা ইউনিয়নে ২০০ জনকে বয়স্ক ভাতার জন্য ইউপি চেয়ারম্যানের কাছে তালিকা চান। তালিকা পাঠানোর পর বিন্নাডাঙ্গী পশ্চিম পাড়ার কবির শিকদারের ছেলে রিপন শিকদার গংরা ঐসব ভাতাভোগীর নামের সিম রেজিস্ট্রেশন করে বিতরণ না করে কৌশলে তিনি নিজের কাছে রেখে দেন। এরপর ঐ ২০০ জনের নামের নতুন সিম কার্ডে নগদ অ্যাকাউন্ট খোলেন।

নগদ অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে প্রথম কিস্তির প্রতি জনের নামে আসা ৬ হাজার টাকা তিনি উত্তোলন করেন। তবে চাপে পড়ে কিছু সিম ফেরত দেন বলে জানা যায়। তবে পাঁচ থেকে ছয় মাস পর সিম পেলেও তারা জানেন না তাদের নগদ অ্যাকাউন্টের পিন কোড। ফলে টাকা তুলতে না পেরে ভাতা থেকে বঞ্চিত হন ।

এরপর সেপ্টেম্বর ও অক্টোবর মাসে ২য় পর্যায়ে ১ হাজার ৫০০ টাকা আসলেও পিন কোড না পাওয়ার কারণে ভাতা উত্তোলন করতে পারেননি। কাউকে পিন কোড দেওয়া হলেও ঐ নতুন সিমে টাকা পাননি তারা। কে তুলে নিয়ে গেছে এ টাকা তা কেউ জানে না।

বিন্নাডাঙ্গী গ্রামের ভাতাভোগী জরিনা খাতুনের ছেলে চুন্নু মিয়া বলেন, দ্বিতীয় পর্যায়ের ১ হাজার ৫০০ টাকা পেলেও তিনি প্রথম কিস্তির আসা ৬ হাজার টাকা পাননি। অথচ এই টাকার ক্যাশ আউট হয়ে গেছে বলে তার মোবাইলে মেসেজ এসেছে। মেসেজে দেখা গেছে পাঁচ মাস আগেই টাকা উত্তোলন করা হয়েছে। এলাকার ফেলু খাসহ আরো অনেকেরই একই অবস্থা।

তারা বলেন, টাকা উত্তোলন না করলেও মেসেজ আসে। রেজিস্ট্রেশন না করেও এক জনের সিম আরেক জনকে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু পিন কোড দেওয়া হয়নি। দিলেও তা পরিবর্তন করে দেওয়া হয়েছে। এভাবেই চার/পাঁচ মাস ঘুরে গ্রাহকদের সিমকার্ড প্রতারক রিপনের কাছ থেকে আনতে হয়েছে।

বিন্নাডাঙ্গীর আব্দুল জলিল জানান, লিস্টে নাম থাকলেও এ পর্যন্ত কোনো টাকাই পাইনি। হাতনীর শাহানাজ বেগম বলেন, তার সিম বন্ধ দেখায়। পরে চালু দেখালেও মোবাইলে কোনো টাকা আসেনি।

ইউপি মেম্বার পারভিন বলেন, এটা নাকি পাশ হয়নি। বিন্নাডাঙ্গী গ্রামের ইব্রাহিম জানান, তিনি ফিঙ্গার দেননি। তবু আরেক জনের সিম তার নামে দেওয়া হয়। ঐ সিম থেকে ১ হাজার ৫০০ টাকা উত্তোলন করেন তিনি।

কাঞ্চন নগরের আছিয়া খাতুন, হাবিবুর রহমান, সাজেদা বেগমের ভাতাভোগীর লিস্টে নাম থাকলেও সিমের জায়গা ফাঁকা। অর্থাত্ সেখানে কোনো সিম নাম্বার বসানো হয়নি। তারা বলেন, টাকা পাওয়া তো দূরের কথা, সিম নেই তাদের নামের ঘরে। অথচ ভাতার লিস্টে তাদের নাম রয়েছে। এভাবেই নানা কৌশলে বয়স্ক ভাতাভোগীদের নামে আসা টাকা আত্মসাত্ করে এ প্রতারক চক্র।

প্রতারক চক্রের সঙ্গে জড়িত থাকার কথা অস্বীকার করে ইউপি চেয়ারম্যান আবুল হোসেন মোল্যা বলেন, বিশেষ বরাদ্দের এই তালিকা প্রণয়ন করে সমাজ সেবা অফিসে প্রেরণ করি এবং চূড়ান্তভাবে অনুমোদন হয়। কিন্তু অনেকেই টাকা পাচ্ছে না বলে আমার কাছে অভিযোগ এলে আমি বিষয়টি ইউএনওকে জানিয়েছি এক মাস আগেই।

এদিকে অভিযুক্ত রিপন শিকদার নিজের দোষ স্বীকার করে বলেন, দ্বিতীয় কিস্তির টাকা সবাই পেয়েছে। তবে প্রথম কিস্তির টাকা বেশির ভাগ লোকই পায়নি। এ টাকা শুধু আমি একা আত্মসাত্ করিনি। সমাজ সেবা অফিসের আঠালিয়া গ্রামের বাচ্চুও জড়িত রয়েছে। তার কাছেই বেশিরভাগ সিম ছিল। এছাড়া এ টাকার ভাগ পেয়েছে ইউপি চেয়ারম্যন ও মেম্বাররা। চেয়ারম্যান এখন নিজে নিরাপদ থাকার জন্য ইউএনও বরাবর আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ দিয়েছে।

অভিযুক্ত বাচ্চু মিয়া বলেন, এ অনিয়মের সঙ্গে আমি জড়িত না। তবে ঐ তিন জনের সিম আমার কাছে আছে এবং তা দিয়ে দেব। কেন আরেক জনের সিম আপনার কাছে—এ প্রশ্নের উত্তর দিতে পারেননি তিনি।

Leave a Comment

error: Content is protected !!