মাটির স্বাস্থ্য সুরক্ষায় ও ফসল উৎপাদনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে ভার্মি কম্পোস্ট সার

মাটির স্বাস্থ্য সুরক্ষায় ও ফসল উৎপাদনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে ভার্মি কম্পোস্ট সার। জৈব পদার্থ হল মাটির প্রাণশক্তি। জৈব পদার্থের উপকরণগুলোর মাঝে অন্যতম উপকরণ হচ্ছে গোবর। ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জে এই গোবরকে প্রক্রিয়াজাত করে প্রস্তুত করা হচ্ছে উৎকৃষ্ট জৈব সার। এই সারের নাম হচ্ছে ভার্মি কম্পোস্ট সার বা কেঁচো সার। কেঁচো দিয়ে এই সার উৎপাদন করা হয়। এই সার মাটির স্বাস্থ্য সুরক্ষা ও ফসলের নিবিড়তা বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে।

উপজেলার বড়হিত ইউনিয়নের পাইকুড়া গ্রামে সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, ওই গ্রামের কৃষক মোজাম্মেল হক (৪০) তার বাড়ির আঙ্গিনায় ছায়াযুক্ত স্থানে টিনশেডের ঘরে রিং চাড়ি ও হাউজ স্থাপন করে পুরোনো গোবর আর রেড বেঙ্গল কেঁচো দিয়ে ভার্মি কম্পোস্ট সার উৎপাদন শুরু করেছেন। প্রতিটি রিং এ ২থেকে আড়াই হাজার কেঁচো রয়েছে।

ভার্মি কম্পোস্ট সার উৎপাদনকারী উদ্যোক্তা মোজাম্মেল হক জানান, কেঁচো গোবর খেয়ে যে মল ত্যাগ করে সেটাই ভার্মি কম্পোস্ট সার। ১শ কেজি গোবর খাওয়ার জন্য ২থেকে আড়াই হাজার কেঁচোর প্রয়োজন হয়। ঈশ্বরগঞ্জে এই সার উৎপাদনে প্রথম পরামর্শদাতা হলেন উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা আলী আকছার খান ও তৎকালীন কৃষি কর্মকর্তা সাধান কুমার গুহ মজুমদার। তাঁদের পরামর্শে প্রথম ২০২০ সালে ১০টি রিং স্থাপন করে রেড ওয়ার্ম কেঁচো দ্বারা এই সার উৎপাদন শুরু করেন। মাত্র ১০ হাজার টাকা পুঁজি বিনিয়োগ করে প্রথম বছরে তার আয় হয় ৪৪ হাজার ৭০ টাকা। পরবর্তীতে শেটের কলেবর বৃদ্ধি করে ১ লক্ষ ১৫ হাজার টাকার মূলধন কাটিয়ে ২০২১ ও ২০২২ সালে স্থানীয় ও উপজেলার বাহিরে কৃষকদের কাছে ৩ লক্ষ ৪৬ হাজার ৫০ টাকার ভার্মি কম্পোস্ট সার বিক্রি করেন। এতে তাঁর লাভ হয় ২ লক্ষ ৩১ হাজার টাকা।

মোজাম্মেল হক আরো জানান, একবার মূলধন বিনিয়োগ করলে আর নতুন করে মূলধনের প্রয়োজন হয় না। তিনি নিজে ও তার স্ত্রী তাসলিমা খাতুন (৩০) সার উৎপাদন কাজ দেখভাল করে থাকেন। এ সার উৎপাদনে অতিরিক্ত শ্রমিকের প্রয়োজন হয় না। আমাদের দেশে রেড ওয়ার্ম ও টাইগার ওয়ার্ম কেঁচো দিয়ে ভার্মি কম্পোস্ট সার উৎপাদন হয়ে থাকে।

কৃষক মোজাম্মেল হক তার বাড়িতে ৮৩ টি রিং থেকে ১০/১২ দিন পর পর ১২ থেকে ১৩ মন ভার্মি কম্পোস্ট সার উত্তোলন করে থাকেন। প্রতিমণ ৫শ ২০ টাকা দরে বিক্রি হয়ে থাকে। এই সার ব্যবহার করে জমিতে আশানুরূপ ফলন পেয়ে কৃষকরা খুবই খুশি। দিন দিন এই সারের ব্যবহার ব্যাপক হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। তাঁর উৎপাদিত সার ধান পাট চাষিরা ছাড়াও ছাদ বাগান মাল্টা বাগান আমবাগান ও শাকসবজি চাষিরা ব্যপকহারে এই সার প্রয়োগ করে পুষ্ট ও সুমিষ্ট ফল উৎপাদন করে আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছেন।
উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা আলী আকছার খান বলেন, ভার্মি কম্পোস্ট সার পরিবেশ বান্ধব। উদ্যোক্তারা সার বিক্রির পাশাপাশি প্রতি কেজি কেঁচো ১হাজার টাকা দরে বিক্রি করে থাকেন। উদ্যোক্তারা কেঁচো ও সার বিক্রি করে স্বাবলম্বী হচ্ছেন।

উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা টিটন বিশ্বাস বলেন, উপজেলায় সফল উদ্যোক্তা মোজাম্মেল হক ছাড়াও মাইজবাগ ইউনিয়নের হারুয়া গ্রামের নুরুল আমিন শিমরাইল গ্রামের মনির উদ্দিন সহ ২০ জন উদ্যোক্তা রয়েছেন। তাদের উৎপাদিত সার শাকসবজি ফলদ বনজ ও ছাদ বাগান পানের বরজ সহ ধান পাট উৎপাদনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। এ সারে রয়েছে নাইট্রোজেন পটাশ ফসফরাস সালফার ম্যাগনেসিয়াম বোরণ জৈব কার্বন পানি ও হরমোন। ভার্মি কম্পোস্ট ব্যবহারে জমির পানি ধারণ ক্ষমতা বাড়ায়। মাটির অনুজৈবিক কার্যাবলী বৃদ্ধি করে। এবং অম্ল ক্ষারের ভারসাম্য বজায় রাখতে সাহায্য করে। উচ্চ ফলনশীল জাতের ফসল ফলাতে রাসায়নিক সারের ব্যবহার প্রয়োজন পড়ে। তবে নিয়মিত কেঁচো সার ব্যবহার করলে রাসায়নিক সারের পরিমাণ ধীরে ধীরে কমিয়ে দিলেও কাঙ্খিত ফলন পাওয়া সম্ভব।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা নুসরাত জামান বলেন, কেঁচো সার সম্পূর্ণ অর্গানিক সার। এ সার ব্যবহারে মাটির উর্বরতা শক্তি বৃদ্ধি পায়। ভার্মি কম্পোস্ট ব্যবহারে মাটির বোনট সমৃদ্ধ হয়। ফসলে পোকা মাকড়ের আক্রমণ কম হয়। যে ফলন পাওয়া যায় তা সম্পূর্ণ বিষ মুক্ত ও স্বাস্থ্য সম্মত। এ সার উৎপাদন ও বিপণন করে স্বাবলম্বী হওয়া যায়।

Leave a Comment

error: Content is protected !!