ভোটের মাঠ: প্রার্থী চায় আ.লীগ, প্রস্তুত নয় বিএনপি

ভোটের মাঠ: প্রার্থী চায় আ.লীগ, প্রস্তুত নয় বিএনপি। জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে গাইবান্ধা-১ (সুন্দরগঞ্জ) আসনে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও জোটসঙ্গী জাতীয় পার্টির (জাপা) নেতা-কর্মীরা সরব। এ আসনে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা এবার একক প্রার্থী চান।

অন্যদিকে বিএনপির নির্বাচনের কোনো প্রস্তুতি নেই। তবে জেলার জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশ-অধ্যুষিত এলাকা হিসেবে পরিচিত সুন্দরগঞ্জ। তাই নির্বাচনে গেলে অন্য দলগুলোর চেয়ে জয়ের ব্যাপারে দলটির সম্ভাবনা বেশি বলে মনে করছেন নেতা-কর্মীরা।

শহর থেকে শুরু করে গ্রামের চায়ের দোকান এবং মোড়ে মোড়ে চলছে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে আলোচনা। নির্বাচন কেমন হবে? কোন দলের কে প্রার্থী হবেন? এসব বিষয় নিয়ে চায়ের কাপে আলোচনার ঝড় ওঠে।

এ আসনে বর্তমান সংসদ সদস্য জাতীয় পার্টির শামীম হায়দার পাটোয়ারী। তিনি ২০১৮ সালে নির্বাচনে মহাজোটের শরিক জাতীয় পার্টি থেকে নির্বাচিত হন। এবারও দলটির একমাত্র মনোনয়নপ্রত্যাশী তিনি। তাঁর দাবি, তিনি নির্বাচিত হয়ে সুন্দরগঞ্জে সুশাসন নিশ্চিত করতে পেরেছেন। রাজনৈতিক হয়রানি বন্ধ করেছেন এবং প্রশাসনকে স্বচ্ছভাবে চালিয়েছেন। তাই সুযোগ পেলে আবারও জয়ের ব্যাপারে আশাবাদী।

জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য ও উপজেলা সভাপতি শামীম হায়দার আরও বলেন, ‘মানুষ মূলত শান্তি চায়, স্বস্তি চায় এবং দুর্নীতিমুক্ত প্রশাসন চায়। আমরা চেষ্টা করেছি সব ধরনের হয়রানি বন্ধ করতে। উন্নয়নমূলক কাজ করেছি। রাস্তাঘাট এখনো উল্লেখযোগ্য করতে পারিনি। করোনার কারণে আমাদের অনেক উন্নয়ন প্রকল্প ব্যাহত হয়েছে। নির্বাচিত হলে আরও অনেক বেশি এ ব্যাপারে মনোযোগী হব।’

এদিকে আওয়ামী লীগের নেতারা বলছেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশ এগিয়ে যাচ্ছে। সব খাতে সরকার সাফল্য দেখিয়েছে। তবে সরকারদলীয় সংসদ সদস্য না থাকায় সাফল্যের যাত্রায় পিছিয়ে আছে সুন্দরগঞ্জ। এ জন্য আগামী নির্বাচনে এখানে আওয়ামী লীগের প্রার্থী চান তাঁরা।

এ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চান উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মিসেস আফরুজা বারী, সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মো. আশরাফুল আলম সরকার লেবু, সহসভাপতি ও প্রয়াত সংসদ সদস্য মনজুরুল ইসলামের স্ত্রী সৈয়দা খুশিদ জাহান স্মৃতি, জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সহসভাপতি সৈয়দা মাসুদা খাজা, উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি উপাধ্যক্ষ আবদুল হান্নান, সহসভাপতি সৈয়দ মশিউর রাব্বানী আপেলসহ আরও অনেকে।

উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আফরুজা বারী বলেন, সরকারদলীয় সংসদ সদস্য না থাকায় উন্নয়নের যাত্রায় পিছিয়ে গেছে সুন্দরগঞ্জ। আর জনগণ সেটা বুঝতে পেরেছে। সে কারণে এলাকার উন্নয়নে আগামী সংসদ নির্বাচনে তাঁরা আওয়ামী লীগের প্রার্থীকেই ভোট দেবেন।

এ আসনে বিএনপির নির্বাচনে যাওয়ার কোনো প্রস্তুতি নেই। তবে নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন হলে ভোটে লড়তে আগ্রহী সম্ভাব্য প্রার্থীরা।

বিএনপি থেকে মনোনয়নপ্রত্যাশী জেলা বিএনপির সহসভাপতি অধ্যাপক ডা. খন্দকার জিয়াউল ইসলাম মোহাম্মদ আলী, সুন্দরগঞ্জ উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক মো. বাবুল আহমেদ, সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক ইফতেখার হোসেন পপেল ও সদস্যসচিব মো. মাহমুদুল ইসলাম প্রামাণিক।

খন্দকার জিয়াউল বলেন, নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন হলে ভোটে লড়বেন তাঁরা।

এদিকে নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন হলে এ আসনে জামায়াতের একমাত্র সম্ভাব্য প্রার্থী মো. মাজেদুর রহমান সরকার। তিনি বলেন, ‘মহামান্য হাইকোর্টে দলের নিবন্ধন নিয়ে মামলা চলমান রয়েছে। আশা করছি, আমরা দলের নিবন্ধনসহ প্রতীক ফিরে পাব। অন্যথায় স্বতন্ত্র প্রার্থীর ব্যানারে নির্বাচন করব।’

এ আসনে ১৯৯১ সালে জাতীয় পার্টি হাফিজুর রহমান প্রামাণিক, ১৯৯৬ সালে বিএনপির বীর মুক্তিযোদ্ধা জাকারিয়া হোসেন খন্দকার, ১৯৯৬ সালে জাতীয় পার্টির ওয়াহেদুজ্জামান সরকার বাদশা, ২০০১ সালে জামায়াতের আবদুল আজিজ মিয়া, ২০০৮ সালে জাতীয় পার্টির আবদুল কাদের খান, ২০১৪ সালে আওয়ামী লীগের মনজুরুল ইসলাম লিটন, ২০১৭ উপনির্বাচনে আওয়ামী লীগের গোলাম মোস্তফা আহম্মেদ এবং ২০১৮ উপনির্বাচনে শামীম হায়দায় পাটোয়ারী মহাজোটের শরিক জাতীয় পার্টি থেকে নির্বাচিত হন।

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আর বাকি এক বছর। এরই মধ্যে শুরু হয়েছে রাজনৈতিক দলগুলোর নড়াচড়া। সভা-সমাবেশের পাশাপাশি নানা কর্মসূচি হাতে নিচ্ছে। মাঠপর্যায়ের পরিস্থিতি নিয়ে পত্রিকার নিয়মিত আয়োজন ‘ভোটের মাঠে’।

Leave a Comment

error: Content is protected !!