মূল্যস্ফীতি দারিদ্রতার হার বাড়াচ্ছে

মূল্যস্ফীতি দারিদ্রতার হার বাড়াচ্ছে। করোনা মহামারির কারণে দারিদ্রের হার এমনিই বৃদ্ধি পেয়েছে তার উপর মূল্যস্ফীতি যেন মরার উপর খরার ঘা। ২০২০ সালের ৮ মার্চ দেশে প্রথম করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়। ভাইরাসের সংক্রমণের হার বাড়তে থাকলে তা রোধে সরকার ওই মাসের ২৬ তারিখ থেকে ৩০ মে পর্যন্ত সাধারণ ছুটি ঘোষণা করে। এতে দেশ লকডাউনের মতো অবস্থায় চলে আসে।

কৃষি খাতে শস্য উৎপাদন, সংগ্রহ ও বিপণন কার্যক্রম সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে চালু থাকলেও অন্য প্রায় সব খাতের কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়ে। এতে চাকরিচ্যুতি, বেতন/মজুরি হ্রাস, ব্যবসা-বাণিজ্য বন্ধ হয়ে যাওয়া ইত্যাদি কারণে অনেকের, বিশেষ করে নিম্নবিত্ত ও নিম্নমধ্যবিত্তের আয় কমে যাওয়ায় দরিদ্র মানুষের সংখ্যা এবং দারিদ্র্যতারহার বেড়ে যায়।

বিবিএসের খানা জরিপ অনুসারে, ২০১৬ সালে দেশের গ্রামাঞ্চলের সার্বিক দারিদ্র্য ছিল ২৬ দশমিক ৪ শতাংশ, ২০১৮ সালের জিইডি-সানেম জরিপ অনুসারে যা ছিল ২৪ দশমিক ৫ শতাংশ। কিন্তু করোনার প্রভাবে ২০২০ সালে এই হার বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪৫ দশমিক ৩ শতাংশ। শহরাঞ্চলে সার্বিক দারিদ্র্যের হার ২০১৬ সালে ছিল ১৮ দশমিক ৯ শতাংশ, ২০১৮ সালে ছিল ১৬ দশমিক ৩ শতাংশ আর করোনার সময়ে ২০২০ সালে তা দাঁড়িয়েছে ৩৫ দশমিক ৪ শতাংশ।

যেখানে করোনা দারিদ্রতার হার বাড়িয়ে দিলো সেখানে নতুন করে যুক্ত হলো মূল্যস্ফীতি। এর ফলে দারিদ্রতার হার যে আরো বেড়ে যাবে তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। চলতি বছরের সেপ্টেম্বরে খাদ্য মূল্যস্ফীতির হার বেড়ে ৫ দশমিক ২১ শতাংশ হয়েছে, যা আগের মাসে ছিল ৫ দশমিক ১৬ শতাংশ। আর খাদ্যবহির্ভূত মূল্যস্ফীতি বেড়ে হয়েছে ৬ দশমিক ১৯ শতাংশ, যা আগের মাসে ছিল ৬ দশমিক ১৩ শতাংশ। এমতাবস্থায় গরিব আরও গরিব হচ্ছে তা পরিষ্কার। কেননা তাদের আয়ের অধিকাংশ চলে যায় নিত্যপণ্য কিনতে। অপর দিকে মধ্যবিত্তদেরও বিনিয়োগ কমছে। ফলে তারাও একটা সময় দারিদ্রের কাতারে নেমে আসবে।

মূল্যস্ফীতির কারণে গরিব ও অভাবী লোকেরা তাদের নিত্যপণ্য কিনতে অক্ষম হচ্ছে ফলে না খেয়ে থাকছে কোন কোন পরিবার। শুধু তাই নয় সম্প্রতি দেখা যাচ্ছে মূল্যস্ফীতির কারণে পরিবারের লোকের চাহিদা মেটাতে না পেরে বাধ্য হয়ে আত্মহননের ঘটনাও ঘটছে। যেটা উন্নয়শীল দেশ বাংলাদেশের জন্য লজ্জার।

খাদ্য মানুষের মৌলিক চাহিদাগুলোর মধ্যে একটি। মূল্যস্ফীতির কারণে যদি সেই খাদ্যসামগ্রী দেশের দারিদ্র জনগোষ্ঠী কিনতে না পারে কিংবা কিনতে যদি চরম দারিদ্রতায় পৌঁছায় তাহলে মৌলিক চাহিদাগুলোর একটি ক্ষুন্ন হবে বলে আমি মনে করি।

তাই সরকার ও প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলতে চাই দেশের দারিদ্রতার হার কমাতে হলে বর্তমানের এই মূল্যস্ফীতি ইস্যুর দিকে নজর দিতে হবে, নাহলে দেখা যাবে একটা সময় মূল্যস্ফীতির জন্য দেশে দরিদ্র পরিবারের সংখ্যা আরো বেড়ে যাবে যা উন্নয়শীল ডিজিটাল বাংলাদেশের কাম্য নয়।

লাইজু আক্তার
শিক্ষার্থী,
নারায়ণগঞ্জ সরকারি মহিলা কলেজ।

Leave a Comment

error: Content is protected !!