ঈশ্বরগঞ্জে লেবু চাষে ঘুরছে ভাগ্যের চাকা

ঈশ্বরগঞ্জে লেবু চাষে ঘুরছে ভাগ্যের চাকা। বাংলাদেশে ভিটামিন ‘সি’এর প্রধান উৎস লেবু। চলতি বর্ষা মৌসুমে আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জে লেবুর ফলন অন্যবারের তুলনায় এবার অনেক ভাল হয়েছে। এতে ঘুরে যাচ্ছে অনেকের ভাগ্যের চাকা। ভালো ফলন ও বাজারে লেবুর চাহিদা থাকায় লেবু চাষে ঝুকছে ঈশ্বরগঞ্জের কৃষকেরা।

তাই প্রতিবছরই লেবু চাষে আবাদি জমির পরিমান বাড়ছে। স্বল্প পুঁজি নিয়ে লেবু চাষ করে অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হয়ে বেকারত্ব দূর করেছেন অনেক যুবক ও সাধারণ কৃষক।

এ উপজেলায় অনেক জাতের লেবু চাষ হচ্ছে। এর মধ্যে কাগজি লেবু, পাতি লেবু, এলাচি লেবু, বাতাবি লেবু ও হাইব্রিড নতুন জাতের সিডলেস (বীজহীন) নামের লেবু বর্তমানে ব্যাপকহারে চাষ হচ্ছে। বাজারে ভালো দাম পাওয়ায় হাসি ফুটছে কৃষকের মুখে।

অধিকাংশ লেবু চাষিরা বলেন, লেবুর বাগান পরিচর্যায় স্ত্রী ও সন্তানরা সহযোগিতা করায় শ্রমিক ব্যয় কম হয়। লেবু বাগানের আয় দিয়েই তাদের সংসারের সব খরচ চলে। লেবু বাগান করে অনেকেই হয়েছেন লাখপতি। রোপনের বছর বাদে প্রতিবছর একবার ডালপালা ছাটা, মাটি কোপানো, প্রতি ৩ মাসে একবার নিড়ানি ও ২-৩ মাস অন্তর সেচ ও সামান্য জৈব সার দিতে হয়। ফলে একর প্রতি বার্ষিক খরচ হয় মাত্র ৪০ থেকে ৫০ হাজার টাকা। আর এক একর জমির লেবু বাগানে আয় হয় কমপক্ষে ৩ থেকে ৪ লাখ টাকা। তাছাড়া নিজের উৎপাদিত কলম চারা দিয়ে নতুন বাগান তৈরি করা ছাড়াও প্রতিটি কলম করা চারা ৩০ থেকে ৫০ টাকা করে বিক্রি করতে পারেন।

উপজেলার মাইজবাগ ইউনিয়নের বিলরাউল গ্রামের লেবু চাষি আনোয়ারুল কাদির বলেন, আমি কৃষি অফিসের পরামর্শে ৪০ শতক পতিত জমিতে লেবুর বাগান করি। বর্তমানে লেবু বিক্রি করে পরিবারের খরচের পরেও আরো আয় থাকে। এ বছর ভালো দাম পেলে বাগান থেকে ১ থেকে দেড় লক্ষ টাকার উপরে লেবু বিক্রি হবে আশা করছি।

বিলরাউল গ্রামের চাষি আসাদুজ্জামান
বিলরাউল গ্রামের চাষি আসাদুজ্জামান

বিলরাউল গ্রামের অপর এক চাষি আসাদুজ্জামান বলেন, আমার বাড়ির সাথে ক্ষেতে ধান বা সবজি করতাম গরু-ছাগল নষ্ট করতো। পরে উপসহকারি কৃষি অফিসারের সাথে যোগাযোগ করলে তিনি ক্ষেত দেখে লেবু চাষ করতে বলেন । উনার কথামতো লেবু চাষ করি এখন বাগান খুব ভালো হয়েছে। বাগান করা খুব সহজ। আশা করি লাভবান হবো।

চরশংকর গ্রামের চাষি মোস্তফা
চরশংকর গ্রামের চাষি মোস্তফা

চরশংকর গ্রামের চাষি মোস্তফা বলেন, বাড়ীর পাশে ১০ শতক পতিত জমিতে লেবুর বাগান করে এখন আমি লাভবান। করোনা ভাইরাস শুরুর সময় থেকে এখন পর্যন্ত প্রায় ৬৫হাজার টাকার লেবু বিক্রি করেছি। লেবু চাষে পরিশ্রম কম লাভ বেশি। কেচু সার দিলে গাছ বেশি বাড়ে, ফল বেশি হয় ও বড় হয়।

বিলরাউল গ্রামের লেবু চাষি রমজান আলী
বিলরাউল গ্রামের লেবু চাষি রমজান আলী

বিলরাউল গ্রামের লেবু চাষি রমজান আলী বলেন, লেবু বাগানে লাভ বেশি। একবার গাছ লাগাইলে ২০-৩০ বছর লেবু হয়। লেবুতে সার-বিষ কম লাগে, বছরে দুইবার সার দেই, ডাল বেশি হলে কেটে দেই। পোকা-মাকর হলে উপসহকারি কৃষি অফিসারের পরামর্শে ওষুধ দেই। আশা করি এই বছর ২ থেকে আড়াই লক্ষ টাকার লেবু বিক্রি করতে পারবো।

উপ সহকারী কৃষি কর্মকর্তা সোহেল রানা বলেন, বর্তমানে লাভজনক ফসলের মধ্যে লেবু চাষ অন্যতম। কলমের চারা রোপন করার ২-৩ বছরের মধ্যেই ফল আসা শুরু করে এবং সারাবছর ফল দেয়। হালকা দোআঁশ ও নিকাশ সম্পন্ন মধ্যম অম্লীয় মাটিতে লেবু ভাল হয়। লেবু একটি উচ্চ ভিটামিন সি সমৃদ্ধ ফল। লেবুতে রয়েছে অনেক ভেষজগুণ লেবুর রস মধু বা আদা বা লবণ এর সাথে মিশিয়ে পান করলে ঠাণ্ডা ও সর্দি কাশি উপশম হয়। কৃষকের অধিক আয়, লেবুর পুষ্টিগুণ ও বাজার চাহিদা পূরণের জন্য উদ্বুদ্ধকরণের মাধ্যমে আমার ব্লকে প্রায় ৩একর জমিতে ১৩টি লেবু বাগান রয়েছে। পাশাপাশি আরো লেবু বাগান সম্প্রসারণের চেষ্টা করছি।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সাধন কুমার গুহ মজুমদার বলেন, এ উপজেলায় ১০হেক্টর জমিতে লেবুর চাষ হয়েছে। উপজেলার মাইজবাগ, আঠারোবাড়ি ও উচাখিলা ইউনিয়নে লেবুর চাষ বেশি হয়েছে। লেবু বাগানের মালিকদের সার্বক্ষণিক সঠিক পরার্মশ দিয়ে আসছি। লেবুচাষ লাভজনক হওয়ায় এরই মধ্যে উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে অসংখ্য বাগান গড়ে ওঠেছে। অধিক লাভজনক এ লেবু বাড়ির উঠানসহ পতিত জমিতে চাষ করে যে কেউ স্বাবলম্বী হতে পারেন। সঠিক ভাবে পরিচর্যা করলে একবার চারা রোপনের পরে একাধারে ২০বছর থেকে ২৫ বছর পর্যন্ত ফলন পাওয়া যায়।

Leave a Comment

error: Content is protected !!