শুভ্র কাশবনে শরতের শেষ হাসি

শুভ্র কাশবনে শরতের শেষ হাসি: শরতের শেষ বিকাল। থেমে থেমে বৃষ্টি। কালো মেঘের আবরণ ভেদ করে উঁকি দিচ্ছে মিষ্টি রোদ। সাদা মেঘের মিটিমিটি হাসি যেন শুভ্রতা ছড়াচ্ছে চারদিকে। কমলা রঙের বোটায় ফুটেছে শুভ্র শিউলি।

সাদা কাশফুল শারদ বন্দনার কলরবে মেতে উঠেছে। শরত্ শোভায় প্রকৃতিতে সাজ সাজ রব। নীল আকাশে চলছে সাদা-কালো মেঘের লুকোচুরি। কখনো কালো মেঘে আবার কখনো সাদা মেঘের আড়ালে সোনালি সূর্যের লুকোচুরি। উপজেলার তুমলিয়ার বিভিন্ন এলাকা ও নাগরী ইউনিয়নের পূর্বাচলে এখন সাদা কাশফুলের মেলা। কাশফুলের বাতাসে চামর দোলানো দৃশ্য মন কাড়ে সবার। প্রতি বছর শরতের এই সময়ে তাই নানা বয়সি দর্শনার্থীদের ভিড় জমে এসব জায়গায়।

কালীগঞ্জ-টঙ্গী সড়কের কামারবাড়ী এলাকার তায়েবা পাম্পের সামনে, তুমলিয়া ইউনিয়নের উত্তর সোম এলাকায় শীতলক্ষ্যা নদীর তীরে, নাগরী-উলুখোলা সড়কে এবং উপজেলার পূর্বাচল এলাকার বিভিন্ন স্থানে অনেকে মুক্ত মনে সাদা কাশফুলের ঘ্রাণ নিচ্ছেন, সুন্দর সেই অনুভূতিগুলো আবার কেউ কেউ সেলফিবদ্ধও করছেন।

কাশবন নিয়ে কথা হয় উপজেলার উত্তর সোম এলাকায় শীতলক্ষ্যা নদীর তীরে ঘুরতে আসা শিশু রাফসান নুর রাফির (৯) সঙ্গে। সে জানায়, কাশবন তার খুব খুব পছন্দ। বিশেষ করে বাতাসে যখন কাশফুল দোল খায় এটা দেখতে তার খুবই ভালো লাগে। তাই বাবার সঙ্গে ঘুরতে এসেছে।

তার বাবা নুরুল ইসলাম বলেন, ‘শরতের কাশফুল আমারও খুব ভালো লাগে। এটা শুধু আমার না, বোধ করি দেশের অধিকাংশ মানুষেরই এই শরতের কাশফুল পছন্দ। এমনিতে সময়-সুযোগ খুব একটা পাই না। ছুটির দিনে ছেলের অনুরোধে ঘুরতে এসে একসঙ্গে বাপবেটা কাশবন দর্শন করলাম।’

বাংলাদেশ এশিয়ান ইউনিভার্সিটির কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী নিশাত বলেন, ‘শরত্ মানেই কাশফুল, নীল আকাশ আর দিগন্ত জোড়া সবুজের সমারোহ। আর কাশফুল হলো শরত্, প্রকৃতি এবং বাংলার মানুষের এক চিরন্তন সঙ্গী। এটা কাউকে বিমর্ষ করে না। কাশফুলের সৌন্দর্য আমাদের মনের সৌন্দর্যকে সমৃদ্ধ করে।’

ভাওয়াল বদরে আলম সরকারি কলেজের উদ্ভিদবিদ্যা বিভাগের অনার্স শেষ বর্ষের শিক্ষার্থী জিনাত রহমান বলেন, বাংলাদেশে ঝকঝকে নীল আকাশ, ঝলমলে সূর্য, অফুরান প্রাণশক্তি এবং পুঁজোর আমেজ নিয়ে আসে শরত্কাল। সবুজ প্রকৃতির কালীগঞ্জে তাই শরতের পূর্ণ আমেজ পাওয়া যায়। এখানকার বিল ভর্তি শাপলা ও পদ্ম ফুল, গাছে গাছে শেফালী, জুঁই, শিউলী, কামিনীসহ উপজেলা জুড়ে শরতের স্মারক কাশফুল যেন সেজে ওঠে শরেক বরণ করে নিতে। শরেক বরণ করে নিতে স্থানীয়রাসহ দূরদূরান্ত থেকে অনেকেই ছুটে আসেন এখানে।

নাগরী সেন্ট নিকোলাস স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষক মো. বিপ্লব হোসেন বলেন, ‘বিকাল হলেই মাঝে মাঝে শরত্ উপভোগ করতে যাই। কিন্তু শরত্ উপভোগ করতে করতে কখন যে প্রকৃতির আকাশে সন্ধ্যার আভা নেমে আসে বুঝতেই পারা যায় না। কাশবনেও যেন নেমে আসে বেলা শেষের স্তব্ধতা। এই স্তব্ধতার সুযোগে প্রতিদিন সূর্য মামাও বিদায় জানাতে পিছপা হয় না।

Leave a Comment

error: Content is protected !!