আজ জন্মেছিলেন আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদ

0
165
আজ জন্মেছিলেন আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদ

আজ জন্মেছিলেন আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদ। পটিয়া পৌরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ডের সুচক্রদণ্ডী গ্রাম। ছিমছাম, গাছগাছালিতে পূর্ণ, শান্ত এ গ্রামে আজ থেকে ১৫১ বছর আগে জন্মেছিলেন আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদ। অদ্ভুত শিহরণ জাগানো এই গ্রামে উপস্থিত হই সাহিত্যবিশারদেরই স্মৃতির খোঁজে। তিনি মারা গেছেন আজ থেকে প্রায় ৬৯ বছর আগে।

কিন্তু তাঁর জন্মভিটেয় জড়ানো স্মৃতি রয়ে গেছে এই গ্রামের সঙ্গে, বাংলাদেশ নামের সঙ্গে। এই ভূখণ্ডের মানুষকে চিন্তার জগতে অনন্য মাত্রায় নিয়ে গিয়েছিলেন যে কয়েকজন মনীষী, আবদুল করিম তাঁদের মধ্যে অন্যতম।

আবদুল করিমের পৈতৃক বাড়িটি সংস্কার করে এখন বানানো হয়েছে একটি জাদুঘর। এই জাদুঘরে আছে সাহিত্যবিশারদের ছবি, কিছু সনদ ও ব্যবহৃত অন্যান্য জিনিসপত্র। খুব ছোট একটি পারিবারিক জাদুঘর বলতে যা বোঝায়, এটি তা-ই। কিন্তু ইতিহাসের এক বিশাল অধ্যায় ধরে আছে বাড়িটি। এই বাড়িতেই আমৃত্যু কাটিয়েছেন আবদুল করিম। এখানেই মারা গেছেন এবং এই বাড়ির পাশেই তিনি চিরনিদ্রায় শায়িত।

স্মৃতিময় এই বাড়ির পলেস্তারা এখন নতুন। নতুন পলেস্তারার আড়ালে ছোঁয়া যায় এক পুঁথিপ্রেমী শীর্ণকায় মানুষের অস্তিত্ব। আমরা ছুঁয়ে দেখি। সুচক্রদণ্ডী গ্রামে সাহিত্যবিশারদের পরিবারের মানুষেরা আছেন। আছেন তাঁর ভাইয়ের কুলের নাতিরা। তাঁরাই দেখে রাখেন এই জাদুঘর। তাঁদেরই একজন জাহেদ উল পাশা ওরফে আকাশ। তিনি আমাদের ঘুরে ঘুরে দেখান সাহিত্যবিশারদের স্মৃতি।

আমরা শ্রদ্ধায় অবনত হই প্রায় আড়াই হাজার পুঁথির সংগ্রাহক আবদুল করিমের প্রতি। শুধু কি পুঁথি সংগ্রহ করেছেন? প্রায় দেড় শ প্রাচীন ও বিস্মৃত কবিকে তিনি সুধী সমাজে পরিচিত করার মাধ্যমে বাংলা সাহিত্যের ভান্ডারকেও ব্যাপকভাবে সমৃদ্ধ করেছেন। পুঁথি সংগ্রহ, সেগুলোর পাঠোদ্ধার, অর্থ নির্ণয়, টীকা লিখন এবং সম্পাদনার মতো কষ্টসাধ্য কাজগুলো তিনি আমৃত্যু করে গেছেন প্রায় একক প্রচেষ্টায়।

আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদের সংগৃহীত প্রাচীন পুঁথি যেমন আমাদের ঐতিহ্য এবং সাহিত্য ও সংস্কৃতি চর্চার ক্ষেত্রে বহু নতুন উপাদানের উৎস হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করেছে, তেমনি সেসব পুঁথি সম্পর্কে তাঁর বিচার-বিশ্লেষণ এবং আলোচনা-সমালোচনা আমাদের ঐতিহ্য-চেতনায় নতুন মাত্রা যোগ করেছে।

ভেবে বেশ অবাক লাগে যে এই মানুষটি শুধু পুঁথি সংগ্রহ এবং তার সম্পাদনাই করেননি। আরও অনেক কাজের সঙ্গে তিনি যুক্ত ছিলেন। তিনি অবৈতনিক সম্পাদক ছিলেন ‘নবনূর’, ‘কোহিনূর’, ‘সওগাত’, ‘সাধনা’ ও ‘পূজারী’ পত্রিকার। শিক্ষকতা থেকে অবসর নেওয়ার পর আবদুল করিম পটিয়ার গ্রামের বাড়িতেই বসবাস করতেন।

এলাকার লোকজনের অনুরোধে তিনি ইউনিয়ন বোর্ডের সদস্য হন এবং বোর্ড ও বেঞ্চের প্রেসিডেন্ট হিসেবে ১৯৩৫ থেকে ১৯৪৫ সাল পর্যন্ত ১০ বছর দায়িত্ব পালন করেন। তিনি পটিয়া আঞ্চলিক ঋণ সালিশি বোর্ডের চেয়ারম্যানও ছিলেন। এ ছাড়া আমৃত্যু তিনি পটিয়া উচ্চ ইংরেজি বিদ্যালয় ও দক্ষিণ ভূর্ষি মধ্য ইংরেজি বিদ্যালয়ের কার্যনির্বাহী পর্ষদের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন।

পাঠকদের জন্য জানিয়ে রাখি, ১৯০৯ সালে চট্টল ধর্মমণ্ডলী তাঁর সাহিত্যকৃতির স্বীকৃতি হিসেবে তাঁকে ‘সাহিত্যবিশারদ’ উপাধিতে ভূষিত করে। এ ছাড়া নদীয়ার সাহিত্য সভা ১৯২০ সালে তাঁকে ‘সাহিত্য সাগর’ উপাধি দিয়ে সম্মানিত করে।

আজ ৩০ সেপ্টেম্বর আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদের ৬৯তম মৃত্যুবার্ষিকী। প্রতিবছরের মতো এবারও পটিয়ায় সাহিত্যবিশারদ স্মৃতি সংসদের উদ্যোগে তাঁর স্মরণসভা অনুষ্ঠিত হবে বলে জানিয়েছেন সংসদের প্রতিষ্ঠাতা ও সভাপতি মুহাম্মদ ছৈয়দ চেয়ারম্যান।

 

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here