সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় বা সৌরভ গাঙ্গুলী (/sʃuːrəv
বাঁহাতি ক্রিকেটার সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় অদ্যাবধি ভারতের সফলতম টেস্ট অধিনায়ক বলে বিবেচিত হন; তার অধিনায়কত্বে ভারত ৪৯টি টেস্ট ম্যাচের মধ্যে ২১টি ম্যাচে জয়লাভ করে। ২০০৩ সালের ক্রিকেট বিশ্বকাপে তার অধিনায়কত্বেই ভারত ফাইনালে পৌঁছে যায়। সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় কেবলমাত্র একজন আগ্রাসী মনোভাবাপন্ন অধিনায়কই ছিলেন না, তার অধীনে যে সকল তরুণ ক্রিকেটারেরা খেলতেন, তাদের কেরিয়ারের উন্নতিকল্পেও তিনি প্রভূত সহায়তা করতেন।
একদিনের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটেও সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় বিশেষ খ্যাতিসম্পন্ন ক্রিকেটার। একদিনের ক্রিকেটে তার মোট রানসংখ্যা এগারো হাজারেরও বেশি। একদিনের ক্রিকেটে তার সাফল্য সত্ত্বেও ক্যারিয়ারের শেষদিকে একদিনের ক্রিকেটে তার স্থলে দলে তরুণ ক্রিকেটারদের নেওয়ার প্রবণতা দেখা যায়। ২০০৮ সালের ৭ অক্টোবর সৌরভ ঘোষণা করেন যে সেই মাসে শুরু হতে চলা টেস্ট সিরিজটিই হবে তার জীবনের সর্বশেষ টেস্ট সিরিজ।২০০৮ সালের ২১ অক্টোবর সৌরভ তার সর্বশেষ প্রথম-সারির ক্রিকেট ম্যাচটি খেলেন।
ব্যক্তিগত তথ্য | ||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|
পূর্ণ নাম | সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় | |||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
জন্ম | জুলাই ৮, ১৯৭২ | |||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
ডাকনাম | দাদা, মহারাজ, প্রিন্স অফ কলকাতা | |||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
উচ্চতা | ৫ ফুট ১১ ইঞ্চি (১.৮০ মিটার) | |||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
ব্যাটিংয়ের ধরন | বাঁহাতি | |||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
বোলিংয়ের ধরন | ডানহাতি মিডিয়াম | |||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
ভূমিকা | ব্যাটসম্যান | |||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
সম্পর্ক | স্নেহাশিষ গঙ্গোপাধ্যায় (দাদা) | |||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
আন্তর্জাতিক তথ্য | ||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
জাতীয় পার্শ্ব |
|
|||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
টেস্ট অভিষেক (ক্যাপ ২০৭) |
২০ জুন ১৯৯৬ বনাম ইংল্যান্ড | |||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
শেষ টেস্ট | ৬ নভেম্বর ২০০৮ বনাম অস্ট্রেলিয়া | |||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
ওডিআই অভিষেক (ক্যাপ ৮৪) |
১১ জানুয়ারি ১৯৯২ বনাম ওয়েস্ট ইন্ডিজ | |||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
শেষ ওডিআই | ১৫ নভেম্বর ২০০৭ বনাম পাকিস্তান | |||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
ঘরোয়া দলের তথ্য | ||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
বছর | দল | |||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
১৯৮৯/৯০ – ২০০৬/০৭ | বাংলা | |||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
২০০০ | ল্যাঙ্কাশায়ার | |||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
২০০৫ | গ্ল্যামারগন | |||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
২০০৬ | নর্দাম্পটনশায়ার | |||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
২০০৮-২০১০ | কলকাতা নাইট রাইডার্স | |||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
২০১১-২০১২ | পুনে ওয়ারিয়রশ্ | |||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
খেলোয়াড়ী জীবনের পরিসংখ্যান | ||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
|
প্রারম্ভিক জীবন
৮ জুলাই, ১৯৭২ সালে, চন্ডীদাস ও নিরুপা গঙ্গোপাধ্যায় দম্পতির কনিষ্ঠ পুত্র সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় কলকাতাতে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা, চন্ডীদাস গঙ্গোপাধ্যায় মুদ্রণ এর ব্যবসা ছিল এবং তিনি শহরের অন্যতম ধনী ব্যক্তিদের মধ্যে একজন ছিলেন। সৌরভের শৈশবকাল অত্যন্ত সুখকর ছিল এবং তাঁর ডাক নাম ছিল ‘মহারাজা’। তাঁর পিতা, চন্ডীদাস গঙ্গোপাধ্যায় দীর্ঘ অসুস্থতার পর ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৩ সালে ৭৩ বছর বয়সে মারা যান।
কলকাতা শহরে বেশির ভাগ লোকের প্রিয় খেলা ‘ফুটবল’ ছিল এবং তার ফলে সৌরভও প্রাথমিকভাবে এই খেলায় আকৃষ্ট হয়েছিলেন। তবে খেলাধুলার প্রতি তাঁর ভালবাসায় বাধ সাধল পড়াশুনো এবং তাঁর মা ক্রিকেট বা কোনও খেলাধুলা পেশা হিসাবে গ্রহণের পক্ষে সৌরভকে খুব একটা সমর্থন করেননি। তবে ততক্ষণে তাঁর বড় ভাই স্নেহাশিস ইতিমধ্যে বেঙ্গল ক্রিকেট দলের একজন প্রতিষ্ঠিত ক্রিকেটার ছিলেন। তিনি সৌরভের ক্রিকেটার হওয়ার স্বপ্নকে সমর্থন করেছিলেন এবং তাঁদের পিতাকে গ্রীষ্মের ছুটিতে সৌরভকে একটি ক্রিকেট কোচিং শিবিরে ভর্তি করতে বলেন, সেই সময় সৌরভ দশম শ্রেণিতে পড়াশোনা করছিলেন।
ডানহাতি হওয়া সত্ত্বেও সৌরভ বাম হাতে ব্যাটিং করতে শিখেছিলেন যাতে তিনি তাঁর ভাইয়ের ক্রিকেট সরঞ্জাম ব্যবহার করতে পারেন। ব্যাটসম্যান হিসাবে কিছু প্রতিশ্রুতি দেখানোর পরে, তাঁকে একটি ক্রিকেট একাডেমিতে ভর্তি করা হয়েছিল সাথে সাথে সৌরভের বাড়িতে একটি ইনডোর মাল্টিম-জিম এবং কংক্রিট উইকেট নির্মিত হয়েছিল যাতে তিনি এবং স্নেহাশিস ক্রিকেটের অনুশীলন করতে পারেন। দুই ভাই অনেকগুলি পুরানো ক্রিকেটের ম্যাচের ভিডিওগুলি দেখতেন, বিশেষত সৌরভের পছন্দ ছিল ডেভিড গাওয়ারের ভিডিওগুলি। ওড়িশার অনূর্ধ্ব ১৫ দলের বিপক্ষে সেঞ্চুরি করার পরে সৌরভকে তাঁর স্কুল, সেন্ট জেভিয়ার্সের ক্রিকেট দলের অধিনায়ক করা হয়েছিল, যেখানে তাঁর বেশ কয়েকজন সতীর্থ অভিযোগ করেছিলেন যে সৌরভ অধিনায়ক ছিল বলে তাঁর অহংকার ছিল। কোনও এক সময় জুনিয়র দলের সাথে সফরকালে, সৌরভে দ্বাদশতম ব্যক্তি হিসাবে দলে থাকতে প্রত্যাখ্যান করেছিলেন, কারণ তিনি মনে করেছিলেন যে খেলোয়াড়দের জন্য সরঞ্জাম এবং পানীয় সরবরাহ করার দায়িত্ব, তাঁর কাজ নয়। তাঁর কাছে তাঁর দলীয় সতীর্থদের এমনভাবে সহায়তা কাজগুলির করা মানে হল তাঁর সামাজিক মর্যাদা থাকবে না এবং তিনি এমন কাজগুলি করতে প্রত্যাখ্যান করেছিলেন। তবে তাঁর খেলোয়াড়ীত্ব তাকে ১৯৮৯ সালে বাংলার হয়ে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে আত্মপ্রকাশের সুযোগ দিয়েছিল এবং একই বছরই তাঁর ভাই বাংলার দল থেকে বাদ পড়েছিলেন।
ক্রিকেট জীবন
অধিনায়ক
তিনি শুধু একজন খেলোয়াড়ই নন, একজন বিখ্যাত অধিনায়কও ছিলেন। তিনি তার ক্রিকেট জীবনে সর্বমোট ৩১১টি একদিনের আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলেছেন এবং ১১,৩৬৩ রান সংগ্রহ করেছেন। পাশাপাশি তিনি ১১৩টি টেস্ট খেলেছেন ও ৭,২১২ রান সংগ্রহ করেছেন। ভারতকে তিনি ৪৯টি টেস্ট ম্যাচে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন যার মধ্যে ভারত জিতেছিল ২১টি ম্যাচে। সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় ভারতকে ১৪৬টি একদিনের আন্তজার্তিক ম্যাচে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন যার মধ্যে ভারত জিতেছিল ৭৬ টি ম্যাচে। তিনি ভারতের একজন মিডিয়াম পেসার বোলারও ছিলেন। তিনি একদিনের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ১০০টি এবং টেস্টে ৩২টি উইকেট দখল করেন। এছাড়া তিনি একদিনের আন্তর্জাতিকে ১০০টি ও টেস্টে ৭১টি ক্যাচ নিয়েছেন।
২০০৮ সালের অক্টোবর মাসে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে খেলার পর তিনি ক্রিকেট থেকে অবসর নেন। এরপরে ২০০৮, ২০০৯ ও ২০১০-এ আইপিএলে কলকাতা নাইট রাইডার্সের হয়ে খেলেন এবং ২০০৮ ও ২০১০-এ এই দলকে নেতৃত্ব দেন। ২০১১ সালে অনুষ্ঠিত আইপিএলের চতুর্থ সিজনে নিলামে তিনি অবিক্রীত থেকে গেলেও শেষ পর্যন্ত পুনে ওয়ারিয়র্সের দলের প্রতিনিধিত্ব করেন। বর্তমানে তিনি দিল্লি ডেয়ারডেভিলসের মেন্টর।
অবসর পরবর্তী জীবন
বর্তমানে সৌরভ গাঙ্গুলী সিএবি (CAB) এর সভাপতি এবং বিসিসিআই – উপদেষ্টা কমিটির সদস্য। সৌরভ আইএসএল ফুটবল দল অ্যাটলেটিকো দি কলকাতার (ATK) অন্যতম কর্ণধর।
সৌরভ গাঙ্গুলী বর্তমানে ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশন অব বেঙ্গল-এর প্রেসিডেন্ট পদে দায়িত্ব পালন করছেন সেই সাথে তিনি ভারতের ক্রিকেট বোর্ডের প্রেসিডেন্ট। এর আগে ভারতীয় ক্রিকেট দলের অন্যতম সফল এই অধিনায়ক বিসিসিআইয়ের টেকনিক্যাল কমিটির চেয়ারম্যান হিসেবে কাজ করেছেন।
অভিনয়
জি বাংলার জনপ্রিয় রিয়েলিটি শো দাদাগিরিতে তিনি উপস্থাপক হিসেবে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করে আসছেন। বকুল কথা জি বাংলার জনপ্রিয় ধারাবাহিকে তাকে দেখতে পাওয়া গিয়েছিল বকুলের আইডল হিসাবে৷ অভিনয়ে তার অবদান খুব একটা বেশি নেই৷
অধিনায়কত্বের পরিসংখ্যান
টেস্ট ক্রিকেটে অধিনায়কত্ব পরিসংখ্যান | ||||||
মাঠ | সময়কাল | খেলার সংখ্যা | জয় | পরাজয় | টাই | ড্র |
---|---|---|---|---|---|---|
নিজ মাঠে | ২০০০-২০০৫ | ২১ | ১০ | ৩ | ০ | ৮ |
বিদেশের মাঠে | ২০০০-২০০৫ | ৫১ | ২৪ | ২৪ | ০ | ৩ |
নিরপেক্ষ মাঠে | ১৯৯৯-২০০৫ | ৫৯ | ৩৪ | ২৩ | ০ | ২ |
সর্বমোট | ১৯৯৯-২০০৫ | ১৪৬ | ৭৬ | ৬৫ | ০ | ৫ |
পুরস্কার
সৌরভ মোট ৩১টি আন্তর্জাতিক একদিনের ম্যাচে সেরা খেলোয়াড়ের পুরস্কার পান।
ওডিআই ম্যান অব দ্য ম্যাচ
প্রতিপক্ষ | ভেন্যু | তারিখ | ম্যাচ পারফরমেন্স | ফলাফল | উৎস |
---|---|---|---|---|---|
দক্ষিণ আফ্রিকা | বাফেলো পার্ক, ইস্ট লন্ডন | ফেব্রুয়ারি ৪,১৯৯৭ | ৮৩ রান(৬x৪, ১x৬) | হার | |
বাংলাদেশ | সিংহলিজ স্পোর্টস ক্লাব গ্রাউন্ড, কলম্বো | জুলাই ২৪, ১৯৯৭ | ৭৩* রান (৮x৪, ২x৬); ১টি ক্যাচ | জয় | |
পাকিস্তান | টরন্টো ক্রিকেট, স্কেটিং এবং কার্লিন ক্লাব | সেপ্টম্বর ২, ১৯৯৭ | ৩২ রান (৪x৪); ১টি ক্যাচ ও ১টি উইকেট | জয় | |
পাকিস্তান | টরন্টো ক্রিকেট, স্কেটিং এবং কার্লিন ক্লাব | সেপ্টেম্বর ১৮, ১৯৯৭ | ২ রান ; ১টি ক্যাচ ও ৫টি উইকেট | জয় | |
পাকিস্তান | টরন্টো ক্রিকেট, স্কেটিং এবং কার্লিন ক্লাব | সেপ্টম্বর ২০, ১৯৯৭ | ৭৩* রান (৮x৪, ১x৬); ২টি উইকেট | জয় | |
পাকিস্তান | টরন্টো ক্রিকেট, স্কেটিং এবং কার্লিন ক্লাব | সেপ্টম্বর ২১, ১৯৯৭ | ৯৬ রান (৫x৪, ২x৬); ২টি উইকেট | হার | |
পাকিস্তান | টরন্টো ক্রিকেট, স্কেটিং এবং কার্লিন ক্লাব | সেপ্টম্বর ৩০, ১৯৯৭ | ৮৯ রান (১১x৪); | জয় | |
পাকিস্তান | জাতীয় স্টেডিয়াম,ঢাকা | জানুয়ারী ১৮, ১৯৯৮ | ১২৪ রান (১১x৪, ১x৬); | জয় |
সৌরভ গাঙ্গুলীর আসল বাড়ি কোথায়?
বাংলাদেশের ময়মনসিংহ জেলার ফুলবাড়ীয়ায় ভারতের ক্রিকেট স্টার সৌরভ গাঙ্গুলীর আদি বাড়ি। এখনও আছে তার পূর্বপুরুষদের গাঙ্গুলী বাড়ি। প্রাচীন বাংলার সংস্কৃতির সম্ভার ছিল ময়মনসিংহ। যার অনেকটারই অংশীদার ফুলবাড়ীয়া উপজেলা। পর্যটনের জন্য এক অপার সম্ভাবনাময় ফুলবাড়ীয়ার চারিদিকে সবুজের সমারোহ। শাল-গজারী, রাবার ও অন্যান্য বৃরাজিসহ বন্যপ্রাণী, অপরূপ সৌন্দর্যের লীলাভূমি সন্তোষপুর। মনোমুগ্ধকর আনই নদী ও বড়বিলাসহ দেশের বৃহত্ অর্কিড বাগান ও আলাদিন পার্ক। এক নজর দেখার জন্য সুযোগ পেলেই চলে আসতে পারেন পর্যটন সম্ভাবনাময় ময়মনসিংহের ফুলবাড়ীয়া উপজেলায়।
ময়মনসিংহ জেলা সদর থেকে ২০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চলে ৩৯৯ বর্গ কিলোমিটার আয়তন নিয়ে ফুলবাড়ীয়া উপজেলা। ১৮৬৭ সালে স্থাপিত হয় ফুলবাড়ীয়া থানা (বর্তমান উপজেলা)। উপজেলা সদর থেকে প্রায় ১৯ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে পাহাড়ঘেরা আঁকাবাঁকা মেঠোপথ পেরোলে চোখে পড়বে নয়নাভিরাম পাহাড়ীঅঞ্চল সন্তোষপুর। গ্রামটি ঘিরে রয়েছে বনশিল্প উন্নয়ন কর্পোরেশনের নিপুন শিল্পীর হাতে তৈরি রাবার বাগান, সবুজের সমারোহ শাল-গজারী এবং বিভিন্ন প্রজাতির-গাছ গাছরাসহ বন্যপ্রাণীর অভয়ারন্য সন্তোষপুর বনবিট।
প্রকৃতির সৌন্দর্য, বন্যপ্রাণী, পাখিদের কিচিরমিচির শব্দ যে কাউকেই করে তুলবে মুহূর্তের মধ্যেই ব্যাকুল। উপজেলার রাঙ্গামাটিয়া ইউনিয়নের বিখ্যাত বড়বিলার ‘নবাইকুরির’ কিংবদন্তী ক’জনাই বা জানে। বড়বিলাতে অনেক কুরিই রয়েছে। তন্মধ্যে প্রায় ৩শ বর্গফুট এলাকা জুড়ে রহস্যঘেরা নবাইকুরি। অদ্যবধি কেউ এর গভীরতা নির্নয় করতে পারেনি। তবে জনশ্রুতি রয়েছে নবাইকুরির তলদেশে সর্বদাই ঝর্ণা প্রবাহিত। শাশ্বত বাংলার অপরূপ সৌন্দর্যের প্রতীক কিংবদন্তীর এক নীরব সাক্ষী বড়বিলার নবাইকুরি।
শুধু তাই নয়, দেশের দ্বিতীয় বৃহত্ বিল হিসাবে পরিচিত এই বড়বিলা। অপরিদেক রাঙ্গামাটিয়া ইউনিয়নে অবস্থিত আনই রাজার ভিটা। বহু বছর আগের কথা। যার নাম ছিল আনই রাজা। জাঁকজমকপূর্ন ছিল এক রাজপ্রাসাদ। নিরাপত্তার জন্য প্রাসাদের চার পাশে বিশাল খাল খনন করা হয়েছিল। একদিন হঠাত্ ঝড় বৃষ্টির রাতে আনাই রাজার মায়ের রূপ ধারন করে এক অলৌকিক শক্তি ‘তোফান’ লোহার প্রাসাদ উড়িয়ে সেই খালে তলিয়ে দেয়। যা আজকের আনই নদী। আনই রাজার ভিটা খনন করলে এখনও পাওয়া যেতে পারে প্রত্মতান্ত্বিক অনেক সম্পদ। উপজেলার পুটিজানা ইউনিয়নে সীমান্তবর্তী শুক পাটুলী গ্রামের দরগা পুকুরের জলের লীলা। পুকুরের পাহাড়ে রয়েছে প্রাকৃতিক বিভিন্ন প্রজাতির বিশাল বড় বড় পূরণো বৃক্ষরাজি ।
বৃক্ষ গুলোতে থাকে কয়েক হাজার টিয়াসহ নানা প্রজাতির পাখি। পাখিগুলোর কলকাকলিতে পুকুরের আশপাশে সবসময় মুখরিত থাকে। দরগায় রান্না করা খাবার মানত করলে ঐ পুকুরের জল ছাড়া কোনও খাবার এখনও সিদ্ধ হয়না। ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের ভরাডোবা সাগরদীঘী পাকা সড়কের পাশে। লাল মাটির পাহাড়ী নির্জন নিভৃত এলাকা এনায়েতপুর ইউনিয়নের দুলমা গ্রামের ১৬ একর জায়গায় রয়েছে দেশের সর্ববৃহত্ অর্কিড ফুলের বাগান। যার কোন সুগন্ধ নেই, আছে শুধু সৌন্দর্য আর রঙের বাহার।
উপজেলার দক্ষিনাঞ্চল সীমান্তবর্তী সবুজেঘেরা লাল মাটির আবরণে বেষ্টিত আঁকাবাঁকা পথ এনায়েতপুর ইউনিয়নের বেতবাড়ি অজপাড়া গ্রামে রয়েছে দেশের সর্ববৃহত্ অত্যাধুনিক আলাদ্দিন’স পার্ক। ইচ্ছা থাকলে এগুলোর পাশাপাশি দেখে যেতে পারেন, উপজেলার চক দেওগাঁও ভারতের ক্রিকেট স্টার সৌরভ গাঙ্গুলীর বংশধরের গাঙ্গুলী বাড়ী, জোরবাড়ীয়া গ্রামের ১২০০ হিজরীতে নির্মিত মসজিদ, রায় বাড়ীর পাশে শিবঘাট মন্দির, আছিম বাজারে হযরত পিরপাল মিছকিন শাহ্ (রাঃ) মাজার, বড়খিলা গ্রামে বিবিরঘর, জোরবাড়ীয়া গ্রামে মুক্তাগাছা জমিদারে ডি-কাচারি ও হাতি বাঁধার ঘর, ফুলবাড়ীয়ার সন্নিকটে ঘাটাইল উপজেলার গুপ্তবৃন্দাবন, যেখানে রাধা-কৃষ্ণের মিলন হতো।
এই ভ্রমণের জন্য সহযোগিতা করেছেন দৈনিক ভোরের কাগজের ফুলবাড়ীয়া প্রতিনিধি হাফিজুল ইসলাম স্বপন, দৈনিক জনতা ও টাইমস ২৪ ডটনেটের ফুলবাড়ীয়া প্রতিনিধি মো. আঃ জব্বার ও স্থানীয় ব্যবসায়ী খোরশেদ আলম। সৌরভ গাঙ্গুলীর নিকট আত্মীয় স্বর্গীয় প্রফুল্ল চরণ গাঙ্গুলীর ছেলে প্রদোষ কুমার গাঙ্গুলী ও তার ছেলে প্রদ্যুত্ কুমার গাঙ্গুলী বিভিন্ন তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করেছেন।