জনবান্ধব এসিল্যান্ড মাহবুবুর রহমান

উবায়দুল্লাহ রুমি, ঈশ্বরগঞ্জ: সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিরুদ্ধে জনগণের অভিযোগ প্রতিনিয়তই শোনা যায়। তবে তাদের মাঝে ব্যাতিক্রমও পাওয়া যায়, যারা নিজের ওপর অর্পিত দায়িত্ব নিষ্ঠার সঙ্গে পালন করে জনগণের আস্থাভাজন ও প্রিয় মানুষ হয়ে ওঠেন। হয়রানি থেকে মুক্তি দেন জনগণকে, নিজের সরকারি দপ্তরকে করে তোলেন জনবান্ধব। তেমনই একজন বিসিএস প্রশাসন ক্যাডারের সদস্য ও সরকারি কর্মকর্তা মাহবুবুর রহমান। ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার এই সহকারী কমিশনার (ভূমি) এখানে সবার কাছে প্রিয় কর্মকর্তা হয়ে উঠেছেন।

ভূমি অফিস মানেই ভোগান্তি, টাকার ছড়াছড়ি, জনগণের হয়রানি আর অসহায়তার জায়গা, একটি স্বচ্ছ, ঘুষবিহীন ও জবাবদিহিতামূলক সেবা কার্যক্রম পাওয়ার ব্যবস্থা করেছেন সহকারী কমিশনার (ভূমি) মাহবুবুর রহমান। তার নেতৃত্বে ঈশ্বরগঞ্জ ভূমি অফিসের নৈরাজ্য দূর হয়ে সেখানে তৈরি হয়েছে আস্থার পরিবেশ।
তাছাড়া বালু উত্তোলন প্রতিরোধ, বাজার মনিটরিং, খাস জমি উদ্ধারসহ জনগণের কল্যাণে সদা সেবা দিয়ে যাচ্ছেন এই কর্মকর্তা। সামনেও জনগণের প্রত্যাশিত সেবা দিতে প্রস্তুত এই কর্মকর্তা। ভূমি সেবা সম্পর্কিত যে কোন বিষয়ে তার সঙ্গে সরাসরি কথা বলতে পারে এবং পরামর্শ পেয়ে উপকৃত হচ্ছেন সাধারণ জনগণ।

তথ্যমতে, ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলায় দায়িত্বপালন করতে গিয়ে তিনি এ পর্যন্ত প্রায় ২.৯৩০০ একর খাস জমি উদ্ধার করেছেন। যার আনুমানিক মূল্য প্রায় ৫ কোটি ৭১ লক্ষ ৪০ হাজার টাকা। তিনি এ পর্যন্ত মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করেন ৬৮টি, ৮২ টি মামলায় ৭৬ জনকে অর্থদন্ড প্রদান করা হয়েছে যার পরিমাণ ৩ লক্ষ ২৭ হাজার ১শত টাকা। তাদের মধ্য থেকে কারাদন্ড দেয়া হয়েছে ৬ জনকে। তিনি ২২-২৩ ইং অর্থ বছরে সাধারণ খাতে ৯৪ লক্ষ ৪০ হাজার ৮শত ৪২ টাকা রাজস্ব আদায় করেছেন।

এ পর্যন্ত ভূমিহীনদের মাঝে তিনি ২১০ টি আশ্রয়ন প্রকল্পের ঘর বিতরণ করেছেন। বিগত ১১ মাস ধরে সরকার নির্ধারিত ২৮ দিনের কম সময়ে ২১ দিনে নামজারী নিষ্পত্তি করছেন। বেশ কিছু শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্ন জায়গায় ভূমি সেবা সহজীকরণ বিষয়ে় অবহিতকরণ সভা করে যাচ্ছেন।

বীর মুক্তিযোদ্ধা, শিক্ষক, ডাক্তার, সুবিধাবঞ্চিত অসহায় মানুষকে, প্রবাসী রেমিট্যান্স ভাইদের জন্য আলাদা ফাইল খুলে দ্রুত সেবা প্রদানের ব্যবস্থা করেছেন। অফিস প্রাঙ্গনে ভূমি সেবা সম্পর্কিত বিভিন্ন সেবা নিয়ে ব্যানার, ফেস্টুন, লিফলেট টানিয়েছেন যাতে সেবা প্রার্থীরা সহজে সেবা সম্পর্কে জানতে পারে। প্রতি সপ্তাহে বুধবার গণশুনানিতে সেবা প্রত্যাশীদের অভিযোগ শ্রবণ, বিভিন্ন ভূমি সমস্যা সম্পর্কিত বিষয়ে পরামর্শ ও সমাধানের ব্যবস্থা করেছেন। জনগণের কল্যাণে জনস্বার্থে নিয়মিত বাজার মনিটরিং করে মাদক নির্মূল, পানি প্রবাহের চলাচলে প্রতিবন্ধকতা দূরীকরণে, ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ, অবৈধ দখল মুক্তকরণে উচ্ছেদ কার্যক্রম, কিশোর গ্যাং, ইভটিজিং প্রতিরোধে ও সামাজিক সম্প্রীতি রক্ষায় নিয়মিত অভিযান ও সচেতনতামূলক প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন নিয়মিত। এছাড়াও তিনি সব সময় চেষ্টা করেন একজন সেবা গ্রহীতাও যেন মন খারাপ করে বিদায় না নেয়, হাসি খুশি মন নিয়ে বাসায় ফিরতে পারে।

এ ভূমি অফিসে ডিজিটাল ভূমি সেবা প্রদানের লক্ষ্যে সেবা গ্রহীতারা সমস্যার কথা সরাসরি এসিল্যান্ডের সাথে মন খুলে বলতে পারেন। ভূমি অফিসকে দালালমুক্ত করতে তিনি প্রতিনিয়ত কাজ করে যাচ্ছেন। জমিসংক্রান্ত সব ধরনের সেবা গ্রহিতার অধিকার নিশ্চিত করে সবার কাছে ভূমি অফিসকে সহজ, স্বচ্ছ ভাবমূর্তি ও গ্রহণযোগ্য করে গড়ে তুলেছেন এ কর্মকর্তা। নিয়মিত ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে অবৈধ বালু উত্তোলনসহ ভেজালবিরোধী অভিযান গতিশীল করেছেন।

মাহবুবুর রহমানের জন্ম ১৯৯০ সালের ২২ নভেম্বর নেত্রকোনা জেলার পূর্বধলা উপজেলার ধলামুল গাঁও গ্রামে। বাবা বীর মুক্তিযোদ্ধা সিদ্দিকুর রহমান ও মা হাজেরা খাতুনের ছেলে তিনি। মাহবুবুর রহমানের শৈশব জীবন গ্রামে কাটালেও পরে উচ্চশিক্ষা’র জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সংস্কৃত বিভাগে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন। পড়াশোনা শেষ করে ৩৬তম বিসিএস এর প্রশাসন ক্যাডারে সুপারিশ প্রাপ্ত হয়ে প্রশাসন ক্যাডারে যোগদান করেন। বর্তমানে তিনি পদোন্নতি লাভ করে সহকারী কমিশনার (ভূমি) পদে কর্মজীবন অতিবাহিত করছেন।

বহুল প্রতিভাবান এই মাহবুবুর রহমান শুধু এসিল্যান্ড হিসেবে নয় কবি হিসেবেও বেশ নাম-ডাক রয়েছে। ৫ম শ্রেণী থেকেই লেখালেখির হাতেখড়ি তার। পরবর্তিতে জাতীয় দৈনিক, বিভিন্ন অনলাইন পোর্টাল ও স্থানীয় দৈনিক, সাপ্তাহিক, মাসিক, পাক্ষিক এবং বার্ষিক পত্র-পত্রিকায় লেখালেখি করেন। পাশাপাশি মাসিক ম্যাগাজিনেও লেখালেখি করেন তিনি। ২০২১ এর বইমেলায় তার সাড়া জাগানো ও আলোচিত কাব্যগ্রন্থ ‘কাব্য টোকাইয়ের অভিষেক’। ২য় কাব্যগ্রন্থ আসে ২০২৩ সালের বইমেলায় ‘পদ্যবাড়ির অন্দরমহল’। এটি বইমেলায় প্রকাশনীর স্টলে এবং অনলাইনে বেস্টসেলার হয়।

তিনি বলেন, সহজ উপায়ে ও স্বল্প সময়ে জনগণের দোরগোড়ায় সেবা পৌছে দেয়া, মানুষের মুখে হাসি ফুটানো আমার লক্ষ্য, এছাড়া মানুষের মৌলিক চাহিদার অন্যতম হচ্ছে তার বাসস্থান এবং পরম আরাধ্য তার ভূমি। এই ভূমির বিরোধ নির্মূলে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে কাজ করে যেতে চাই।

Leave a Comment

error: Content is protected !!