সায়েম সোবহান আনভীর দেশের বৃহত্তম শিল্প সংস্থা বসুন্ধরা গ্রুপের বর্তমান ব্যবস্থাপনা পরিচালক। তিনি একজন দুর্দান্ত উদ্যোক্তা এবং বাংলাদেশের ইতিহাসে সর্বকালের একটি গ্রুপ সংস্থার সর্বকনিষ্ঠ ব্যবস্থাপনা পরিচালক যিনি কেবল বিশ বছর বয়সে একজন ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসাবে যোগদান করেছিলেন।
সায়েম সোবহান আনভীর
|
|
---|---|
জন্ম | ৩১ শে জানুয়ারী ১৯৮১ (বাংলাদেশ) |
জাতীয়তা | বাংলাদেশি |
অন্যান্য নাম | আনভীর |
পেশা | ব্যাবসা চেয়ারম্যান, বসুন্ধরা গ্রুপ |
কর্মজীবন | ২০০১-বর্তমান |
দাম্পত্য সঙ্গী | সাবরিনা সোবহান |
গার্লফ্রেন্ড | মুসারাত জাহান মুনিয়া |
ওয়েবসাইট | www.bashundharagroup.com |
সায়েম সোবহান প্রাথমিক জীবন:
কোথায় সায়েম সোবহান আনভীর
ধোঁয়াশা তৈরি হয়েছে বসুন্ধরা গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সায়েম সোবহান আনভীর এর অবস্থান নিয়ে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে গুঞ্জন ছড়িয়েছে, আনভীর গত সোমবার (২৬ এপ্রিল) রাতেই দেশত্যাগ করেছেন। তবে ইমিগ্রেশন পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, আনভীর দেশেই আছেন।
ইমিগ্রেশন পুলিশের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা গণমাধ্যমকে জানান, তাদের সিস্টেমে চেক করে দেখা গেছে সায়েম সোবহান আনভীর দেশে আছে।
এছাড়া ডিএমপির গুলশান বিভাগের উপ-কমিশনার সুদীপ কুমার চক্রবর্তী গণমাধ্যমকে জানান, সায়েম সোবহান দেশের বাইরে চলে গেছেন কি না এ ব্যাপারে আমাদের পক্ষ থেকে ইমিগ্রেশনে খোঁজ নেয়া হয়েছে। ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে তিনি দেশের বাইরে যাননি।
রাজধানীর গুলশানে ফ্ল্যাট থেকে কলেজছাত্রী মোসারাত জাহান মুনিয়ার মরদেহ উদ্ধারের ঘটনায় দায়ের হওয়া মামলার আসামি বসুন্ধরা গ্রুপের এমডি সায়েম সোবহান আনভীরের বিদেশযাত্রার ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন আদালত।
গুলশান দুই নম্বরের একটি ফ্ল্যাটে একা থাকতেন কলেজ ছাত্রী মুনিয়া। চলতি বছরের মার্চ মাসে এক লাখ টাকা মাসিক ভাড়ায় তিনি ওই ফ্ল্যাটে ওঠেন। সোমবার (২৬ এপ্রিল) সন্ধ্যায় ওই বাসা থেকে সিলিং ফ্যানের সঙ্গে ঝুলন্ত অবস্থায় মুনিয়ার মরদেহ উদ্ধার করা হয়।
অভিমান আর ক্ষোভে ঠাসা মুনিয়ার ৬ ডায়েরি
তীব্র অভিমান আর ক্ষোভে ঠাসা মোসারাত জাহান মুনিয়ার ছয় ডায়েরি। পাতায় পাতায় লিখে রেখেছেন জীবনে ঘটে যাওয়া নানা ঘটনাবলী। সায়েম সোবহানের সঙ্গে কিভাবে পরিচয়, পরিচয় থেকে প্রণয় এবং সবশেষে করুণ পরিণতির কারণও লিখে গেছেন। লাশ উদ্ধারের পর পুলিশ মুনিয়ার বাসা থেকে ছয়টি ডায়েরি উদ্ধার করা হয়েছে।
পুলিশের গুলশান বিভাগের উপ-কমিশনার সুদীপ কুমার চক্রবর্তী জানান, ছয়টি ডায়েরি উদ্ধার করা হয়েছে। আমরা এগুলো যাচাই-বাছাই করছি। এখানে অনেক কিছু লেখা রয়েছে। মামলার তদন্তে এগুলো কাজে লাগবে।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তারা জানান, ডায়েরির একটি পাতায় সায়েম সোবহানকে উদ্দেশ্য করে লেখা রয়েছে, ‘আমার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় হয়েছে। আগামীকাল ভোরে এসে তুমি আর আমাকে আর পাবে না।’
পুলিশ কর্মকর্তারা বলছেন, আত্মহত্যার আগে কোনও একটি বিষয় নিয়ে ঝামেলা হওয়ার কারণে মেয়েটি এসব কথা লিখেছেন বলে তারা ধারণা করছেন।
তদন্ত সংশ্লিষ্ট পুলিশ কর্মকর্তারা বলছেন, ২০১৯ সায়েম সোবহানের সঙ্গে মুনিয়ার পরিচয় এবং প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। এর আগে বনানীর যে বাসায় তারা স্বামী-স্ত্রী হিসেবে থাকতেন, সেই বাসার সন্ধান পাওয়া গেছে। পুলিশ বলছে, তারা সবগুলো বিষয়ে খতিয়ে দেখছেন। সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ, কল রেকর্ড বিশ্লেষণ, ডিএনএ নমুনা সংগ্রহ সবকিছু করা হচ্ছে।
সোমবার (২৬ এপ্রিল) সন্ধ্যায় গুলশানের ১২০ নম্বর সড়কের ১৯ নম্বর বাসার একটি ফ্ল্যাট থেকে মোসারাত জাহান মুনিয়ার লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। এ ঘটনায় রাতেই মুনিয়ার বড় বোন নুসরাত জাহান বাদী হয়ে আত্মহত্যায় প্ররোচনার অভিযোগ এনে বসুন্ধরা গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সায়েম সোবহানের বিরুদ্ধে একটি মামলা দায়ের করেন।
মামলায় অভিযোগ করা হয়েছে, সায়েম সোবহান আনভীরের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক ছিল মুনিয়ার। আর ওই বাসায় আনভীরের যাতায়াত ছিল। সায়েম সোবহান আনভীর মাঝে মধ্যে ওই ফ্ল্যাটে স্বামী-স্ত্রীর মতো আসা যাওয়া করতো।
মামলার অভিযোগে বড় বোন নুসরাত বলেন, ‘গত শুক্রবার আমার বোন ফোন করে জানায়, আসামী আনভীর তাকে বকা দেয় যে, কেন ফ্ল্যাট মালিকের বাসায় গিয়ে ইফতার করে এবং ছবি তুলে। কারণ জানতে চাইলে আনভীর বলে ফ্যাট মালিকের স্ত্রী ফেসবুকে ছবি পোস্ট করেছে। এটা পিয়াসা দেখেছে। পিয়াসা মালিকের স্ত্রীর ফেসবুক ফ্রেন্ড এবং পরিচিত ছিলেন। পিয়াসা আনভীরের মাকে সব জানিয়ে দিবে। এসময় আনভীর মোসারাতকে বলে তোমার আর এইখানে থাকার দরকার নাই। তুমি কুমিল্লায় চলে যাও। আমি দুবাই চলে যাচ্ছি। কারণ আম্মা জানতে পারলে তোমাকে মেরে ফেলবে।’
বড় বোন নুসরাত মামলায় উল্লেখ করেন, ২৬ এপ্রিল সকাল নয়টার দিকে মুনিয়া তার ব্যবহৃত মোবাইল নম্বর থেকে আমাকে ফোন করে কান্নাকাটি করে বলে আমাকে আনভীর বিয়ে করবে না। আনভীর মুনিয়াকে জাস্ট ভোগ করেছে এবং বলেছে তুই আমার শত্রুর সঙ্গে মিলিত হইছিস। মনে রাখিস তোকে আমি ছাড়বো না। আমাকে চিৎকার করে কান্না করতে করতে বলে যে কোনও সময় আমার বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে তোমরা তাড়াতাড়ি ঢাকায় আসো। এরপরই তারা ঢাকায় এসে তারা মুনিয়ার লাশ উদ্ধার করেন বলে জানান নুসরাত।
যা বললেন মুনিয়ার বড় বোন
ঢাকার গুলশানের একটি বিলাসবহুল ফ্ল্যাট থেকে উদ্ধার হওয়া মৃত কলেজছাত্রী মুশরাত জাহান মুনিয়ার বড় বোন নুসরাত জাহান বলেছেন, ‘গত কিছুদিন ধরে মুনিয়ার মন খারাপ ছিল। সে বিয়ের কথা আনভীরকে বলেছিল। এ নিয়ে তাদের মধ্যে মনোমালিন্য হয়।’ মঙ্গলবার (২৭ এপ্রিল) বিকালে ঢাকা থেকে কুমিল্লায় ফিরে নগরীর বাগিচাগাঁও এলাকায় অরণী ভবনের ফ্ল্যাটে সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন তিনি।
সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন মুনিয়ার বড় বোন নুসরাত জাহান। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘দুবছর আগে থেকে বসুন্ধরার ব্যবস্থাপনা পরিচালক সায়েম সোবহান আনভীরের সঙ্গে মুনিয়ার সম্পর্ক হয়। ওই সম্পর্কের পর তাদের মধ্যে অনেক কিছুই হয়েছে।’
নুসরাত জাহান দাবি করেন, ‘‘গত কিছু দিন ধরে মুনিয়ার মন খারাপ। সে বিয়ের কথা আনভীরকে বলেছিল। এ নিয়ে তাদের মধ্যে মনোমালিন্য হয়েছে। কালকে মুনিয়া ফোন করে বলে, ‘আমাকে মেরে ফেলবে। আমাকে ধোঁকা দিয়েছে, ধোঁকা দিয়েছে। আপু তুমি তাড়াতাড়ি ঢাকায় আসো, আমার অনেক বড় বিপদ। আমার যেকোনও সময় একটা দুর্ঘটনা ঘটতে পারে’। বিষয়টি জেনে ঢাকায় রওনা দেই এবং যেতে যেতে তাকে অনেক ফোন দেওয়া হয়, কিন্তু সে আর ফোন ধরেনি। পরে বাসায় গিয়ে দরজা নক করলেও সে খুলেনি। এ সময় বাসার মালিককে ডেকে ঘরের তালা ভেঙে তাকে ঝুলন্ত অবস্থায় দেখতে পাই। আনভীর ওই বাসায় আসা-যাওয়া করেছে, সিসিটিভির এমন ফুটেজ পুলিশ পেয়েছে।’’
এর আগে মঙ্গলবার বাদ আসর কুমিল্লা নগরীর টমসমব্রিজ কবরস্থানে মুনিয়ার দাফন সম্পন্ন করা হয়। ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে মুনিয়ার মরদেহ ময়নাতদন্ত শেষে বিকালে কুমিল্লা নগরীর বাগিচাগাঁও এলাকায় তার বড় বোনের বাসায় নিয়ে আসা হয়। এ সময় উৎসুক মানুষ বাসাটির আশপাশে ভিড় জমায়।
এসময় মুনিয়ার ভাই আশিকুর রহমান সবুজ সাংবাদিকদের বলেন, আমার বোন মুনিয়া সুইসাইড করার মতো মেয়ে না। আমরা মনে করছি এটি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড। আমি আপনাদের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীকে জানাতে চাই, আমরা মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান। আমার বাবা একজন মুক্তিযোদ্ধা। তিনি মৃত্যুর আগ পর্যন্ত বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ধারণ করে আওয়ামী লীগের রাজনীতি করেছেন। প্রধানমন্ত্রীর কাছে আমাদের আকুল আবেদন, পরিকল্পিত এই হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।
জানা যায়, নগরীর মনোহরপুরের উজির দীঘির দক্ষিণপাড় এলাকার বাসিন্দা মৃত বীর মুক্তিযোদ্ধা ও শহর আওয়ামী লীগের সাবেক সহ-সভাপতি সফিকুর রহমানের মেয়ে মোসারাত জাহান মুনিয়া রাজধানীর মিরপুর ক্যান্ট. পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষার্থী। এবার এ প্রতিষ্ঠান থেকে তার এইচএসসি পরীক্ষা দেওয়ার কথা ছিল। এর আগে সে কুমিল্লা নগরীর বাদুরতলা এলাকার ওয়াইডব্লিউসিএ নামক একটি স্কুল থেকে ৫ম শ্রেণি পর্যন্ত লেখাপড়া করে। পরে সে নগরীর নজরুল এভিনিউ এলাকার মডার্ন হাইস্কুলে ষষ্ঠ শ্রেণিতে ভর্তি হয়ে ৮ম শ্রেণি পর্যন্ত লেখাপড়া করে এবং সর্বশেষ রাজধানীর মিরপুর মনিপুরী স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে এসএসসি পাস করে। পরিবারে এক ভাই ও দুই বোনের মধ্যে সে সবার কনিষ্ঠ।
জানা যায়, গুলশান দুই নম্বর এভিনিউয়ের ১২০ নম্বর সড়কের ১৯ নম্বর প্লটের বি/৩ ফ্ল্যাটে একা থাকতেন কলেজছাত্রী মুনিয়া। চলতি বছরের মার্চ মাসে এক লাখ টাকা মাসিক ভাড়ায় তিনি ওই ফ্ল্যাটে ওঠেন। সোমবার (২৬ এপ্রিল) সন্ধ্যায় ওই বাসা থেকে সিলিং ফ্যানের সঙ্গে ঝুলন্ত অবস্থায় মুনিয়ার লাশ উদ্ধার করা হয়।
1 thought on “সায়েম সোবহান আনভীর জন্ম, দাম্পত্য সঙ্গী, গার্লফ্রেন্ড, পেশা”