মফস্বল সাংবাদিকতা -জাহিদ হাসান

মফস্বল সাংবাদিকতা -মো. জাহিদ হাসান: মফস্বলে যারা সাংবাদিকতা করেন তারা কি সাংবাদিক? নাকি রিপোর্টার? প্রশ্নটি নিয়ে ভাবেন না হয়তো অনেকেই। কিন্তু যারা ভাবেন তারা বেশিরভাগ বলে থাকেন, মফস্বলে যারা পত্রিকায় লিখেন তারা রিপোর্টার।

তাদের মতে সাংবাদিকতা বিষয়ে যারা পড়াশোনা করে সাংবাদিকতায় আসেন তারাই সাংবাদিক, বাকিরা রিপোর্টার। বিষয়টি একটু বিস্তারিত আলোচনা করলেই পরিষ্কার হয়ে যাবে। আসুন আগে জেনে নেয়া যাক সাংবাদিক কাকে বলে। ‘সাংবাদিক’ শব্দটি ব্যাপক এবং বিস্তৃত। ছোট করে এর সংঙ্গায়ণ বেশ কঠিন।

সাংবাদিক হলেন এমন একজন, যিনি অনুসন্ধান করেন এবং পাঠ্য, ফটো বা অডিও আকারে তথ্য সংগ্রহ করেন, সংবাদের যোগ্য রুপে প্রক্রিয়া করেন এবং বিতরণ করেন জনসাধারণের কাছে। অপরদিকে একজন রিপোর্টার বা প্রতিবেদক হলেন এমন একজন, যিনি বিভিন্ন উৎসের মাধ্যমে তথ্য সংগ্রহ করেন এবং শ্রোতাদের কাছে উপস্থাপন করেন।

রিপোর্টার বা প্রতিবেদক একটি সংবাদমাধ্যমে সংবাদের নিজস্ব উৎস। রিপোর্টার হতে পারেন শিক্ষানবিশ থেকে শুরু করে বিশেষ প্রতিনিধি পর্যন্ত। দু’টো বিষয় একটু গভীরে গিয়ে চিন্তা করলেই স্পষ্ট হয়। কার্যত এদের মধ্যে কোন পার্থক্য নেই। দু’টোই সংবাদ সংগ্রহ এবং বিতরণের সাথে জড়িত। তবে সেটা কখনও প্রত্যক্ষ ভাবে আবার কখনও পরোক্ষভাবে। এক কথায় সাংবাদিক অর্থ ‘সংবাদ লেখক’। আরও পরিষ্কার করে বলা যাক। একটি প্রশ্ন করলে হয়তো স্পষ্ট হবে বিষয়টি। ভাষা আগে তৈরি হয়েছে নাকি ব্যাকরণ? উত্তর সবারই জানা। ভাষা তৈরি হয়েছে আগে। ভাষা শেখার সুবিধার্থে পরবর্তীতে সৃষ্টি হয়েছে ব্যাকরণ। ঠিক তেমনিভাবে, সংবাদ সংগ্রহ এবং তা জনসমক্ষে প্রচারের কাজ শুরু হয়েছে বহুকাল আগে। সাংবাদিকতায় পড়াশোনার সূত্রপাত তারও বহু পরে। সুতরাং বলা যায় সাংবাদিকতায় পড়াশোনা করে যারা এই পেশায় আসেন শুধু তারাই সাংবাদিক নন। ‘সাংবাদিক’ শব্দটি গৃহীত হয়েছিল ১৭১০সালে। এর আগেও সাংবাদিকতা ছিল। কিন্তু তখন সাংবাদিকদের বিভিন্ন নামে ডাকা হতো। কাগজের ভদ্রলোক, রাজ লেখক, সরকারি লেখক ইত্যাদি। যে নামেই ডাকা হোক না কেন,তাঁদের কাজ ছিল সংবাদ সংগ্রহ এবং উপস্থাপন।

প্রথম সংবাদপত্রের খবর পাওয়া যায় প্রাচীন রোমে। খ্রিস্টপূর্বাব্দ ৫৯ এর দিকে। তখন জনগণের বিভিন্ন বক্তব্য একটি নির্দিষ্ট স্থানে ঝুলিয়ে রাখা হতো। জার্মানিতে নিয়মিত প্রকাশিত হতো একটি সংবাদপত্র, ১৬০৯ সালের দিকে।

এবার আসা যাক সাংবাদিকতার পড়াশোনা বিষয়ে। সাংবাদিকতা শুরুর প্রায় কয়েকশো বছর পর শুরু হয় সাংবাদিকতা নিয়ে পড়াশোনা।

১৮৭৯-৮৪ সালে কলম্বিয়ার মিসৌরি বিশ্ববিদ্যালয়ে সাংবাদিকতার প্রথম বিশ্ববিদ্যালয় কোর্স শুরু হয়। ১৯১২ সালে নিউ ইয়র্ক সিটির কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিকতায় প্রথম স্নাতক প্রোগ্রাম প্রতিষ্ঠা করে। বাংলাদেশে এ বিষয়ে পড়াশোনা শুরু হয় তারও অনেক পর।

সাংবাদিকতার প্রাতিষ্ঠানিক পাঠ শুরু হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৯৬২ সালে। পরবর্তীতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়াও চট্টগ্রাম, রাজশাহী, জগন্নাথ ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে এ বিষয়ে ডিগ্রি লাভের দ্বার উন্মুক্ত হয়। বর্তমানে সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশাপাশি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়েও রয়েছে পড়ার সুযোগ। সাংবাদিকতার ইতিহাস পর্যালোচনায় এতটুকু নিশ্চিত হয়েই বলা যায় সাংবাদিক আর রিপোর্টার এক নয়, ধারণাটি ভিত্তিহীন।

মফস্বল সাংবাদিকদের নিয়ে একটু আলোচনা করা যাক। তাঁর আগে একটি বাস্তব অভিজ্ঞতা তুলে ধরতে চাই। কয়েকজন সফল ব্যবসায়ীদের সাথে কথা বলার সিদ্ধান্ত নিলাম একদিন। তাঁদের সফলতার গল্প শোনার জন্যে। সবার গল্প শোনা শেষে একটি কমন প্রশ্ন করেছিলাম সবাইকে। যারা তরুণ, যারা আপনাদের মত ব্যবসায় আসতে চায় তাঁদের প্রতি আপনার বক্তব্য কী? উত্তরে সবাই দিয়েছেন প্রায় একই রকম উত্তর। ব্যবসার বর্তমান পরিস্থিতি ভাল নয়। নতুনদের জন্য মোটেও সুবিধাজনক হবে না। মূলত নিরুৎসাহিত করেছেন নতুনদের। বিষয়টি নিয়ে যখন অন্যান্যদের সাথে কথা হয়, তখন সবাই ব্যবসায়ীদের উত্তরকে ইচ্ছেকৃত প্রতিকূল বলে দাবি করেছেন। সবাই হয়তো একই রকম নয়, তবে অন্যকে সফল দেখার মানসিকতা লালন করা মানুষের সংখ্যা কমেছে আশংকাজনক হারে।

সাংবাদিকতার ক্ষেত্রেও কিছুটা এমনই। বিশেষ করে যারা মফস্বলে সাংবাদিকতায় আসতে চায় তাদেরকে নিরুৎসাহিত করা হয়। পুরনো সাংবাদিকরা নতুনদের সামনে উপস্থাপন করেন, নেতিবাচক দিক। সম্ভাবনার বিষয়টি আড়ালেই থেকে যায়। তবে সাংবাদিকতার বর্তমান পরিস্থিতি নেতিবাচক দিকেই বেশি ইঙ্গিত দেয়। কিন্তু এই পরিস্থিতি মোকাবেলায় দরকার নতুন সুস্থ মানসিকতার নতুন মুখ। উপযুক্ত পরিবেশ তৈরিতে পুরনো এবং নতুনরা মিলে বড় রকমের পরিবর্তন আনতে হবে। কিন্তু সেটি খুবই চ্যালেঞ্জিং। বিশেষ করে মফস্বলের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ।

মফস্বলে শুধুমাত্র সাংবাদিকতায় আসাটাই প্রতিকূল নয়। শুধু নতুনদের জন্যই চ্যালেঞ্জিং নয়। নতুন,পুরাতন সবার জন্যই এক যুদ্ধ ক্ষেত্র। সে যুদ্ধে প্রায় প্রতিটি সাংবাদিক এক একটি আলাদা দল। কিন্তু সুবিধা লাভের আশায় কৃত্রিম দলবদ্ধতার একটি প্রবণতা লক্ষ্য করা যায়। ব্যক্তিগত স্বার্থের বেলায় সবাই দল-মতের উর্ধ্বে চলে যায়। সবাই বিশ্বাস করে -‘কারও নইতো আমি, কেউ আমার নয়‘। অবশ্য এ নীতিতে চলাটাই বুদ্ধিমানের কাজ বলে মনে করি। কারণ প্রত্যাশা আর প্রাপ্তি অসামঞ্জস্য হলেই কষ্টের উত্থান। তাই কারও কাছে প্রত্যাশা না করে ‘একলা চলো‘ নীতি অনুসরণকারী সাংবাদিকরাই বুদ্ধিমান। তবে অতি চালাকের গলায় দড়িও পরে মাঝে মাঝে। চালাকি করতে গিয়ে হলুদ রং গায়ে মাখেন নিজের অজান্তেই। মাঝে মাঝে জেনেশুনেও মাখেন। একটা সময় ছিল যখন ‘হলুদ সাংবাদিক ‘ শব্দটা বেশ অবাক করতো। ভাবতাম এত রং থাকতে সাংবাদিকরা হলুদ কেন? লাল আর হলুদ সবসময় আমার অপছন্দের জায়গায় থাকতো। তাই হলুদ শুনে কিছুটা বিরক্ত লাগতো। হলুদের প্রতি লাগা আমার বিরক্তির প্রতিফলন হয়েছে ‘হলুদ সাংবাদিকতা’র ‘হলুদ’ শব্দে। আমার কাছেও হলুদ রং এর যেমন মূল্যায়ন, সাংবাদিকতায়ও হলুদ শব্দের তেমন মূল্যায়ন।

মনে পড়ে, মাঝে মধ্যে বন্ধুদেরকে হলুদ বলে গালিগালাজ করার কথা। যার ভীতরে এক,বাইরে আরেক তাকেই হলুদ বলে গালি দিতাম। মূলত তখন থেকেই জানা শুরু, ‘হলুদ’ নেতিবাচক শব্দ। হলুদ সাংবাদিকতা বলতে, ব্যক্তিগত স্বার্থ হাসিলের জন্য অপ-সাংবাদিকতায় লিপ্ত হওয়াকে বুঝায়। এই ‘হলুদ’ রং মোটামুটি পুরো বাংলাদেশে জুড়েই রয়েছে। তবে মফস্বলে রং টা একটু বেশিই হলুদ।

সবকিছু ছাপিয়ে যদি বলতে হয়, ভাল নেই মফস্বল সাংবাদিকরা। প্রথমেই বলতে হয় মফস্বল সাংবাদিকদের আয় রোজকার নিয়ে। প্রথম সারির কিছু পত্রিকা ব্যতিত নেই কোন সম্মানি। থাকলেও অনেক সময় সেটি নামমাত্র এবং অনিয়মিত। যে কারণটি সাংবাদিকদের অসৎ হতে এক ধাপ এগিয়ে দেয়। পরিচয়পত্র ভাঙিয়ে রোজকার করতে বাধ্য হন অনেক সাংবাদিক। কিছুটা অলিখিত প্রকাশ্য সত্যে পরিণত হয়েছে বিষয়টি। এ কারণে মান হারিয়েছে মফস্বল সাংবাদিকতা। এটি শুধু মফস্বলের চিত্র নয়। তবে মান হারানোর বিষয়টির দায় কি এড়াতে পারে পত্রিকা কর্তৃপক্ষ? যোগ্যতা সাপেক্ষে নিয়োগ প্রদানের মাধ্যমে, সম্মানির ব্যবস্থা করলে, সংবাদের মান এবং সাংবাদিকতার মান দু’টোই রক্ষা হত। সব জেনে শুনেও সবাই নিরব দর্শকের ভূমিকায়। সম্মানি প্রদান করার বিষয়ে তেমন কোন ব্যবস্থা চোখে পড়েনা। অনেক সাংবাদিক নিজেকে সাংবাদিক পরিচয় দিতেও লজ্জাবোধ করেন। কারণ পরিচয় দেওয়ার পরের প্রশ্নই আসে, বেতন কত?

মফস্বলে সাংবাদিকদের শিকার হতে হয় নোংরা রাজনীতির। সাংবাদিকতায় আসার পর মেনে নিতে চান না অন্য সাংবাদিকরা। নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে হয় কাঠখড় পুড়িয়ে। তবে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর মূল্যায়ন আসা শুরু হয়। শুরুতে বিরোধিতাকারীরা পরবর্তীতে দু’হাত ভরে গ্রহন করে। এতে মূলত তাদের স্বার্থই বেশি মাত্রায় প্রমাণিত হয়। সংবাদ তৈরিতে পোহাতে হয় বেগ। মাঝে মাঝে চাপ বেড়ে সহ্যসীমাও ছাড়ায়। পত্রিকা অফিস থেকে চাপ তো থাকেই,তার উপর জেলা প্রতিনিধিরাও চড়াও হন। নিজের নিউজের ভার চাপিয়ে দেন মফস্বল সাংবাদিকের কাঁধে। সংবাদ সংগ্রহের জন্যেও দৌড়ের উপর রাখেন। চতুর্মুখী চাপে নিষ্পেষিত হয় মফস্বল সাংবাদিকরা। আবার মাঝে মাঝে খারাপ আচরণের স্বাক্ষী হতে হয় তাঁদের।

জীবনের ঝুঁকি শহরের তুলনায় অনেকাংশে বেশি মফস্বল সাংবাদিকদের। শহরের তুলনায় মফস্বল ছোট জায়গা। লোকজন কম, সাংবাদিকও কম। এতে করে সবাই সবার পরিচিত থাকে। তাই সংবাদ তৈরিতে অনেক সময় বিপাকে পড়তে হয়। দুর্নীতি ও অনিয়মের বিরুদ্ধে সংবাদ প্রকাশ করলে আসতে থাকে হুমকি। সুপারিশ তো অহরহ। ‘এংরি ইয়াং ম্যান’ হয়ে সাংবাদিকতায় আসলেও হুমকি আর সুপারিশের কাছে ধোপে টিকে না।

পুলিশের সাথে বিরোধ থাকলে বা বিরোধী সংবাদ প্রকাশ করলে তুচ্ছ ঘটনায় হাতকড়া পরার ঘটনাও পুরনো। ঝুঁকির তুলনায় প্রাপ্তির খাতা একেবারে শূন্য। শহরের তুলনায় শুধু ঝুঁকি বেশি নয়, সংবাদ তৈরির কষ্টও বেশি। জায়গা ছোট হওয়ায় সংবাদের উৎস থাকে কম। তাই সংবাদ তৈরিতে সময় দিতে হয় প্রচুর। এক্ষেত্রে ভারতের পিকে সিনেমার একটি লাইন বলতেই হয় ‘কাভি নিউজ মিলতি হ্যায়,কাভি বানানা পারতা হ্যায়’।

দৌড়াদৌড়ি কিন্তু এখানেই শেষ নয়! বিজ্ঞাপনের দৌড়ঝাঁপ মফস্বল সাংবাদিকতার বড় একটি অধ্যায়। যদিও বিজ্ঞাপন একটি পত্রিকার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয় কিন্তু মফস্বল সাংবাদিকদের জন্য বিজ্ঞাপনের পেছনে দৌড়ানো এবং সংগ্রহ করা কতটা কঠিন সেটি মফস্বল সাংবাদিক মাত্রই বোধগম্য।

সংবাদপত্রের জন্মলগ্ন থেকেই বিজ্ঞাপন ছিল। তাই পত্রিকাকে মূল ধারায় রাখতে বিজ্ঞাপন জরুরি। কিন্তু মফস্বলের সাংবাদিকদের কাছে এটি ‘মরার উপর খাঁড়ার ঘা’। বিজ্ঞাপনের মধ্যে শুভেচ্ছা বিজ্ঞাপন এবং সরকারি বিজ্ঞাপনের বিষয়টিই মূখ্য। সাংবাদিকদের ভীড়ে শুভেচ্ছা বিজ্ঞাপন পাওয়া অনেক কষ্টসাধ্য বিষয়। রাজনৈতিক প্রতিহিংসার জন্য অনেক সময় বিজ্ঞাপন দাতা পর্যন্ত পৌঁছানোই কঠিন হয়ে যায়। আর সরকারি বিজ্ঞাপনের বেলায় তো কথাই নেই! রীতিমতো ‘সোনার হরিণ’। এই ‘সোনার হরিণ’ পোষ মানিয়ে রাখেন গুটি কয়েক সাংবাদিক। তাই তাদের হাতছাড়া হয়না সহজে। যদি ঘুণাক্ষরেও হাতছাড়া হয় তাহলে শুরু হয় অন্তরকোন্দল। সেইসাথে প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষ চাপে পড়েন বিজ্ঞাপনদাতা।

এতো গেল বিজ্ঞাপন নেওয়ার ইতিহাস! ইতিহাসের পর শুরু হয় নাটক। বিজ্ঞাপনের বিল তোলার নাটকীয়তায় হার মানেন বেশিরভাগ সাংবাদিক। এই নাটকের ভিলেন আবার কিছু সাংবাদিকরাই। নিম্নমানের পত্রিকার জন্য শুভেচ্ছা বিজ্ঞাপন নিয়ে যে বিল তারা তৈরি করেন তাতে বিপাকে পড়তে হয় অন্য সাংবাদিকদের। একেক সাংবাদিক একেক রকম বিল করায় সাংবাদিকদের নিয়ে অবিশ্বাস তৈরি হয় বিজ্ঞাপনদাতার মাঝে। এর জন্য বিল সংক্রান্ত যাবতীয় নিয়মকানুনের অজ্ঞাতাও অনেকাংশে দায়ী। অনেকক্ষেত্রে প্রথম সারির সাংবাদিকদের হাতের টাকা দিয়েও বিজ্ঞাপন বিল পরিশোধ করতে হয়।

নেই কোন নির্দিষ্ট আয় তবুও ব্যয়ের বেলায় কমতি রাখা যায় না। ফলে অর্থনৈতিক ঝুঁকি তৈরি হয়। সারাজীবন সাংবাদিকতা করে দু’হাত ভরে শুধু অপ্রাপ্তি জমা হয়। তৈরি হয় হতাশা। সমাজের দর্পণ হিসেবে পরিচিত সাংবাদিক সমাজ। তাঁদের জীবন যখন হতাশায় পর্যবসিত হয় তখন সে আয়নায় বিপর্যস্ত জাতি ছাড়া কিছু চোখে পড়ে না।

তারপর আবার অসম্মান সইতে হয়। সাংবাদিক শব্দকে ‘সাংঘাতিক‘ বলে নেতিবাচক দৃষ্টিতে দেখা হয় সাংবাদিকদের। অনেকে তো আবার সরাসরি ডাকতেও পিছপা হন না। আমার এক ব্যাংকার বন্ধুর বলা একটি কথা না বললেই নয়। তাদের ট্রেনিং চলাকালীন বলে দেওয়া হয়েছিল, সাংবাদিকরা উচ্চ ঝুঁকির কাস্টমার। এখানেও অসম্মানের শিকার সাংবাদিকরা।

তবে পেশাটা প্রকৃতপক্ষে সম্মানের। হয়তো দৃষ্টিভঙ্গির জন্য একেকজন একেকভাবে চিন্তা করেন। কিন্তু মহান এই পেশাটি সেবার ধর্ম। চাইলেই সব চাকরিতে এবং ব্যবসাতে সরাসরি মানুষের সেবা করা যায় না। কিন্তু সাংবাদিকতায় মানুষের সেবা করার অফুরন্ত সুযোগ রয়েছে। কিন্তু সেবা দানের মত করে তাদের তৈরি করতে হবে, দিতে হবে উপযুক্ত পরিবেশ এবং সম্মান। দিতে হবে নিরাপত্তা। স্বমহিমায় সংবাদের পেছনে কাজ করার মানসিকতা কেবল তখনই তৈরি হবে। কেবল তখনই সাংবাদিক নামক আয়নায় প্রতিফলিত হবে সুন্দর গোছানো সমাজ, সুস্থধারার বাংলাদেশ।

লেখক:
মো. জাহিদ হাসান
শিক্ষক এবং সাংবাদিক

Leave a Comment

error: Content is protected !!