ছাত্রলীগ কেন নির্যাতকের ভূমিকায়

ছাত্রলীগ কেন নির্যাতকের ভূমিকায়। আওয়ামী লীগ ও সরকারের সুনাম বাড়ুক—তেমন কোনো কাজ না করার সিদ্ধান্ত কি বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছাত্রলীগের কমিটিগুলো নিয়েছে? যদি এই প্রশ্নের উত্তর ‘না’ হয়, তবে একের পর এক অঘটন ঘটিয়ে কেন ছাত্রলীগ খবর তৈরি করছে? ছাত্রলীগ যদি একটি আতঙ্কের নাম হয়, সেটি কি আওয়ামী লীগ, সরকার এবং ব্যক্তিগতভাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সুনাম বাড়ায়? কেউ বলতে পারেন, ছাত্রলীগের পরিচয় দিয়ে কেউ খারাপ কিছু করলে প্রধানমন্ত্রীর বদনাম হবে কেন? হবে এ জন্যই যে তিনি ছাত্রলীগের সাংগঠনিক অভিভাবক।

কথাগুলো বলা হলো বুধবার পত্রিকায় প্রকাশিত দুটি খবর পড়ে।

প্রথম খবরটি কুষ্টিয়ার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের আর দ্বিতীয়টি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের। ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে এক ছাত্রীকে নির্যাতনের অভিযোগ পাওয়া গেছে ছাত্রলীগের এক নেত্রী ও তাঁর সহযোগীদের বিরুদ্ধে। রাতে কয়েক ঘণ্টা আটকে রেখে ওই ছাত্রীকে অশ্লীল ভাষায় গালিগালাজ, মারধরের পর একপর্যায়ে বিবস্ত্র করে ভিডিও করা হয়। কোথাও অভিযোগ দিলে এই ভিডিও প্রকাশ করার হুমকিও দেওয়া হয়।

দ্বিতীয় খবরটি হলো, রোববার রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী হলে এক শিক্ষার্থীকে হল কক্ষে আটকে রেখে তাঁর ওপর শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন চালিয়েছেন ছাত্রলীগের দুই নেতা। তাঁকে মেরে ‘শিবির’ বলে চালিয়ে দেওয়ার হুমকিও দেওয়া হয়েছে। কৃষ্ণ রায় নামের ওই শিক্ষার্থীকে জোর করে তাঁর রুম থেকে বের করে দেওয়ার ক্ষমতা ছাত্রলীগ নেতাদের কে দিয়েছে? এভাবে ‘জোর যার মুল্লুক তার’ নীতি নিয়ে চললে ছাত্রলীগ কি সাধারণ শিক্ষার্থীদের সমর্থন পাবে? দিন কিন্তু চিরদিন কারও সমান যায় না।

ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভুক্তভোগী ওই ছাত্রী ফিন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী। অভিযুক্ত ছাত্রলীগ নেত্রীর নাম সানজিদা চৌধুরী অন্তরা। তিনি বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি। তিনিও একই বিভাগের ছাত্রী। ভুক্তভোগী নবীন শিক্ষার্থী এলাকার পরিচিত এক আপুর সঙ্গে দেশরত্ন শেখ হাসিনা হলের গেস্টরুমে ওঠায় শনি ও রোববার দুই দফায় হলে সানজিদার নেতৃত্বে সাত-আটজন মিলে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীর ওপর নির্যাতন চালান। কিছুদিন আগে ঢাকায় ইডেন কলেজেও ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে একই ধরনের অভিযোগ উঠেছিল।

যাঁদের বিরুদ্ধে যখন অভিযোগ ওঠে, তখন তাঁরা সব অস্বীকার করে আত্মরক্ষার চেষ্টা করেন। কিন্তু এভাবে আর কত? ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব এবং হল ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের উচিত হবে খোঁজখবর নিয়ে দোষীদের বিরুদ্ধে উপযুক্ত শাস্তির ব্যবস্থা করা।

ছাত্রলীগের কমিটিতে থাকলে কিংবা ছাত্রলীগের সদস্য হলে কেন কারও কারও মাথা গরম হয়ে যায় এবং সবকিছু করার ঔদ্ধত্য দেখায়? বিষয়টি আওয়ামী লীগ নেতৃত্বের ভেবে দেখা উচিত। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কিংবা হল-হোস্টেলে কোনো শিক্ষার্থী যদি কোনো অন্যায় আচরণও করেন, তার বিচারের দায়িত্ব ছাত্রলীগকে কে দিয়েছে? প্রশাসনকে তোয়াক্কা না করে ছাত্রলীগের নামে আইন নিজেদের হাতে তুলে নেওয়ার প্রবণতা বন্ধ করা না হলে এর জন্য একসময় বড় খেসারত দিতে হবে।

Leave a Comment

error: Content is protected !!