এই সময়ে খুশকি থেকে বাঁচতে -শারমিন রহমান

এই সময়ে খুশকি থেকে বাঁচতে -শারমিন রহমান। ডিসেম্বরের শুরু মানে শীত কড়া নাড়ছে দরজায়। শীতের আগমন অনেক আনন্দ, ছুটি, ঘুরতে যাওয়ার পরিকল্পনা আসে; সাথে সাথে আসে ত্বক, চুল নিয়ে নানা চিন্তা। ঘুরতে যাওয়ার জন্যই হোক আর স্বাভাবিক জীবন যাপনের জন্যই হোক ত্বক, চুল সুস্থ থাকা খুবই জরুরি।

শীতের শুরুতে চুল খসখসে হয়ে যায় সাথে মাথার স্কাল্পেও খুশকি হওয়ার প্রবণতা বাড়ে। এতে চুলের যেমন ক্ষতি হয়, নিজের স্বাভাবিক সৌন্দর্যও নষ্ট হয়। অনেকেই খুশকির সমস্যা নিয়ে খুবই বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়েন। আবার খুশকির কারণে চুলের ঘনত্ব কমে গেলে নিজের মধ্যে মানসিক চাপও তৈরি হয়। খুশকি হলে মাথায় অনেক চুলকানিসহ নিয়মিত চুল পড়তে পারে। মাথার ত্বক বা স্কাল্পে এক ধরনের ফাঙ্গাস অতিরিক্ত হওয়ার কারণে এটি হয়ে থাকে। কিভাবে শীতের খুশকি থেকে বাঁচতে পারবেন আর কী করলে আপনার চুল ও থাকবে সুন্দর জেনে নিই তার অদ্যপান্ত—

খুশকি বিভিন্ন কারণে হতে পারে। যেসব কারণে খুশকি হতে পারে সেগুলো হলো—

  • মাথার ত্বক বা স্কাল্পে একটা সাধারণ চক্র হিসাবে সবসময় কিছু নতুন কোষ উত্পন্ন হয় ও কিছু পুরানো কোষ ঝরে যায়। তবে যদি পুরানো মরা কোষ জমে যায় এবং সাদা আঁশের মতো গুঁড়া পড়তে থাকে এবং চুলকানি হয় যাকে আমরা খুশকি বলে থাকি। স্কাল্পের শুষ্ক চামড়া যা ম্যালেসেজিয়া নামক এক ধরনের ফাঙ্গাস অতিরিক্ত হওয়ার কারণেই খুশকি হয়ে থাকে।
  • মাথার লোমকুপে ময়লা জমলে। শীতের শুষ্ক আবহাওয়ার কারণে ধুলোবালির পরিমাণও বাড়ে, তাই মাথার খুশকি বাড়ে।
  • শীতের সময় আবহাওয়ায় আর্দ্রতা কমে যাওয়ার ফলে দেহের ত্বকের পাশাপাশি মাথার ত্বকও শুষ্ক হয়ে যাওয়ার কারণে খুশকি বেশি হয়ে থাকে। এছাড়া এসময় বাইরের ঠান্ডা বাতাস ও ঘরের তুলনামূলক গরম বাতাসের ফলে তাপমাত্রার যে অসামঞ্জস্যতা দেখা যায় সে কারণেও খুশকি হতে পারে।
  • চুল যথেষ্ট পরিমাণে না আঁচড়ালেও খুশকি হতে পারে। যদি চুল কম আঁঁচড়ানো হয় তাহলে মাথার ত্বকের চামড়ার ঝরে যাওয়ার প্রবণতা অনেক কমে যায়। ফলে মাথায় খুশকির সৃষ্টি হয়।
  • যারা মাথায় অতিরিক্ত তৈল ব্যবহার করে তাদের খুশকির সংক্রমণ বেশি হয়ে থাকে। অতিরিক্ত ব্যবহার করা তেল স্তুপ আকারে চুলের গোড়ায় জমা হয়ে পরবর্তী সময়ে সেখানে ছত্রাকের প্রাদুর্ভাব ঘটে; যার ফলে মাথায় খুশকির পরিমাণ বেড়ে যায়।
  • যদি পর্যাপ্ত পরিমাণে শ্যাম্পু না করা হয় তাহলে মাথার ত্বক অপরিষ্কার থাকে। এর ফলেও মাথায় খুশকির উত্পত্তি হতে পারে।
  • সঠিক খাদ্যাভাসের অভাবও খুশকির অন্যতম কারণ। যদি গৃহীত খাবারে পর্যাপ্ত পরিমাণে ভিটামিন বি ও জিংক না থাকে তাহলেও খুশকি হওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যায়। এছাড়া অধিক পরিমাণে চর্বিজাতীয় খাদ্য গ্রহণ করলেও খুশকি হতে পারে।
  • সকলের স্কাল্পেই ম্যালেসেজিয়া নামক এক ধরনের ফাঙ্গাস অল্প পরিমাণে থাকে এবং তেমন কোনো সমস্যার সৃষ্টি করে না। তবে মাথার ত্বকে ফাঙ্গাসটির পরিমাণ অতিরিক্ত বেড়ে গেলে তা ত্বকের ক্ষরিত তেল শোষণ করে নেয়। এর ফলে স্কাল্প অতিরিক্ত ত্বকীয় কোষ উত্পাদন করে থাকে। এ সকল অতিরিক্ত কোষ মৃত হলে স্কাল্প ও চুলের তেলের সাথে মিশে খুশকির সৃষ্টি হয়।
  • অতিরিক্ত মানসিক চাপও খুশকির একটি কারণ। যারা অতিরিক্ত চাপের মধ্যে থাকেন তাদের খুশকি হওয়ার প্রবণতা বেশি পরিলক্ষিত হয়।
  • যাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম তাদের খুশকি বেশি হয়ে থাকে। এছাড়া বিশেষ কিছু রোগ যেমন— পারকিন্সন ডিসিস, হূদরোগ, স্ট্রোক, সেন্সিটিভ ত্বক ও ত্বকের সমস্যা (সোরিয়াসিস, একজিমা) ইত্যাদি যাদের রয়েছে তাদেরও খুশকির প্রবণতা বেশি লক্ষ্য করা যায়। সম্প্রতি এক গবেষণায় পাওয়া যায়, ১০.৬% মানুষ যাদের এইচআইভি আছে তাদের খুশকির সমস্যা বেশি হয়ে থাকে।
  • অনেক সময় পানির সমস্যার কারণেও খুশকি হতে পারে। যদি পানিতে ক্লোরিনের পরিমাণ বেশি থাকে তাহলে ত্বক তাড়াতাড়ি শুষ্ক হয়ে যায়, যা মাথায় খুশকির কারণ হয়ে ওঠতে পারে।

খুশকি দূর করতে যা যা করবেন

  • মাথার ত্বকে ম্যালেসেজিয়া নামক ফাঙ্গাসের পরিমাণ কমিয়ে আনা বা নস্ট করতে পারলেই খুশকি কমে যাবে। তাই খুসকি দূর করার জন্য ডাক্তারগণ একমাত্র বিজ্ঞানভিত্তিক ছত্রাকনাশক শ্যাম্পু কিটাকোনাজল (Ketoconazole 2%) ব্যবহারের উপদেশ দিয়ে থাকেন। এই শ্যাম্পু ব্যবহারের নিয়ম হলো খুশকি দূরীকরণে চুল ধুয়ে তাতে কিটোকোনাজল ২% শ্যাম্পু লাগিয়ে ৫ মিনিট অপেক্ষা করতে হবে। এরপর চুল ভালোভাবে ধুয়ে নিতে হবে। এভাবে সপ্তাহে ২ বার করে ২-৪ সপ্তাহ ব্যবহারে খুশকি কমে যাবে। যাদের নিয়মিত খুশকি হয় তারা ১ বা ২ সপ্তাহ পর পর প্রতিরোধক হিসেবে এই শ্যাম্পু ব্যবহার করতে পারেন। এর ফলে তারা দীর্ঘদিন খুশকিমুক্ত থাকতে পারবেন। এছাড়াও শ্যাম্পুটি তৈলাক্ত সেবাসিয়াস গ্রন্থি থেকে ত্বকের তৈলাক্ত উপাদান বের হওয়া কমিয়ে আনে, যার ফলে খুশকি দূর হয়। এছাড়া এর ফলে মাথার ত্বকে চুলকানি কমে, চুল পড়া বন্ধ হয় এবং আক্রান্ত ব্যক্তি বিব্রতকর পরিস্থিতি থেকে মুক্তি পেতে পারে। যদি কারও ফাঙ্গাল বা অন্যান্য একজিমা জাতীয় অসুখ না থাকে তাহলে এই শ্যাম্পু ব্যবহারে খুশকি ৯৫% ভালো হয়ে যাওয়ার কথা। অবশ্য যদি ইনফেকশন হয়ে যায় বা চুলকানি বেশি হয় তাহলে চিকিত্সকের পরামর্শ অনুযায়ী ক্রিম বা লোশন ব্যবহার করা লাগতে পারে।
  • খুশকির সমস্যা দূর করতে অ্যাপল সাইডার ভিনিগার ব্যবহার করতে পারেন। সমপরিমাণ ভিনিগার ও পানি একসঙ্গে মিশিয়ে মাথার ত্বকে মালিশ করুন। ১৫ মিনিট অপেক্ষা করে তা ধুয়ে ফেলুন। সপ্তাহে দু’বারের বেশি এটা ব্যবহার করা যাবে না।
  • নারিকেল তেল ও লেবু খুশকি দূর করতে খুব ভালো কাজ করে। দুই টেবিল-চামচ নারিকেল তেল ও সমপরিমাণ লেবুর রস একসঙ্গে মিশিয়ে মাথার ত্বকে মালিশ করুন। এর পর শ্যাম্পু দিয়ে চুল পরিষ্কার করে নিন। তবে মাথার ত্বক যাদের সংবেদনশীল তাদের লেবু ব্যবহারের ক্ষেত্রে সতর্ক থাকতে হবে।
  • গ্রিন টি ব্যাক্টেরিয়ারোধী উপাদান সমৃদ্ধ এবং এটা মাথার ত্বকের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে সহায়তা করে। তাই খুশকি কমাতে গ্রিন টি ব্যবহার করতে পারেন। এক কাপ গরম পানিতে দুটি টি ব্যাগ ২০ মিনিট ধরে ডুবিয়ে রাখুন। ঠান্ডা হয়ে এলে তা মাথার ত্বকে ব্যবহার করে ৩০ মিনিট অপেক্ষা করুন। এর পর ঠান্ডা পানি দিয়ে তা চুল ধুয়ে নিন।
  • বাইরে বের হলে ধুলোবালি মাথায় জমে খুশকির প্রাদুর্ভাব বাড়িয়ে তোলে। তাই এই সমস্যা দূর করতে মাথায় স্কার্ফ বা ওড়না ব্যবহার করা যেতে পারে।
  • চুলের খুশকি নিয়ন্ত্রণে খাদ্যাভ্যাসের পরিবর্তন একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এজন্য মাথার ত্বক ভালো রাখতে প্রচুর পরিমাণে শাকসবজি খাওয়া সহ চর্বিজাতীয় খাবার পরিহার করতে হবে।

এই শীতে খুশকি থেকে পরিত্রাণ পেতে এসব পদ্ধতি অবলন্বন করে সুফল পেতে পারেন। মনে রাখবেন, চুলে খুশকি হলে দ্রুত সমাধান করা জরুরি না হলে হতে পারে বড় সমস্যা।

Leave a Comment

error: Content is protected !!